উঠল। সৃষ্টির মেরুদণ্ড য়গদ্রাসিল বা জগৎতরুর শিকড় কেটে মহানাগ নিধুগ বিকট মূর্তিতে বেরিয়ে এল। আর তারই সঙ্গে ভীষণ শব্দে হীমদলের শিঙার আওয়াজ বেজে উঠল—সাবধান! সাবধান! সাবধান!
দেবতারা সব ঘুমের থেকে লাফিয়ে উঠে রামধনুকের রঙিন পথে নেমে আসলেন। যে বিরাট সাপ সমুদ্রের গভীর গুহায় দেবতার ভয়ে লুকিয়ে ছিল, সে আজ সমুদ্রের জল তোলপাড় করে বেরিয়ে এল। হিমের দেশের অসুররা সব ঝাপসা ধোঁয়ার বর্ম পরে কুয়াশায় চড়ে এগিয়ে এল। অগ্নিপুরীর দৈত্য-দানব মশাল জ্বেলে চারিদিক রাঙিয়ে এল। তারপর আকাশ চিরে দৈত্যরাজ সুর্ত্র এলেন; আগুনের শিখার মতো, প্রলয়ের উল্কার মতো, এসেই তিনি স্বর্গদ্বারের সেতুর উপরে দলেবলে ঝাঁপিয়ে পড়লেন, আর রামধনুকের রঙিন সেতু কাঁচের মত গুঁড়িয়ে গেল।
তারপরেই প্রলয় যুদ্ধ। আদি দেবতা অদিনের একটিমাত্র চোখ, আর নেকড়ে-অসুর ফেনরিসের সঙ্গে লড়তে গিয়েই বিপদে পড়লেন। রাহুর বাপ ফেনরিস, তার মা হল রাক্ষসী অঙ্গুর্বদা আর বাপ স্বয়ং লোকি। অসুরের প্রকাণ্ড দেহ যুদ্ধের উৎসাহে বাড়তে বাড়তে পাহাড় পর্বত ছাড়িয়ে উঠল; তার রক্তমাখা হাঁ-করা মুখে অদিন একবার ঢুকে গেলেন; আর তাঁকে পাওয়াই গেল না। ফ্রেয়ার ভাই মহাবীর ফ্রে গোলমালে তাঁর অজেয় খড়্গ খুঁজেই পেলেন না; তিনি সুর্ত্রের হাতে প্রাণ হারালেন। দেবরাজ থর্ ভীষণ হাতুড়ির ঘায়ে সমুদ্রের বিরাট সাপকে খণ্ড খণ্ড করে আপনি তার বিষাক্ত রক্তে ডুবে গেলেন। এদিকে অদিনের পুত্র বিদার এসে পিতৃঘাতী ফেনরিসকে দুই টুকরো করে ছিঁড়ে ফেললেন। বড়-বড় দেবতা অসুর একে একে সবাই যখন প্রায় শেষ হয়েছে, তখন সুর্ত্রের হাত থেকে আগুনের খড়্গ ছুটে গিয়ে স্বর্গে মর্ত্যে পাতালে প্রলয়ের আগুন জ্বেলে দিল। গাছপালা পুড়ে গেল, নদীর জল শুকিয়ে গেল, স্বর্গের সোনার পুরী ভস্ম হয়ে মিলিয়ে গেল। তারপর সব যখন ফুরিয়ে গেল তখন বিদার দেখলেন, বড়-বড় দেবতা অসুর কেউ আর বাকি নেই। কেবল থরের দুই ছেলে যুদ্ধের শ্মশানে থরের হাতুড়ি খুঁজে বেড়াচ্ছে!
আর লোকি? বিশ্বাসঘাতক লোকি অসুরের দলের মধ্যে মরে রয়েছে—হিমদলের খড়্গ তার বুকে বসান। হিমদলও মহাযুদ্ধে অবসন্ন হয়ে বীরের মত রক্তাক্ত বেশে মরে আছেন।