পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-প্রথম খণ্ড.djvu/৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ওর জল ফুরায় না। আপনি যে তিন চুমুক দিয়েছিলেন, তাতে কতক জায়গায় সমুদ্রের ধারে চড়া পড়ে গিয়েছে।

 “আর ঐ বেড়ালটা কি জানেন? ও হচ্ছে ‘স্ক্রাইমিড’—সে সাপের মতো সমস্ত পাহাড় নদী সমুদ্রসুদ্ধ পৃথিবীটাকে শক্ত করে বেঁধে রাখে! আপনার টানে পৃথিবীটা প্রায় দশখানা হয়ে ফাটবার জোগাড় হয়েছিল।

 “আর ঐ বুড়ি ঝি হচ্ছে জরা, অর্থাৎ বৃদ্ধ বয়স। বুড়ো বয়সে কাকে না কাবু করে? আর, কাল সকালে আপনি যে দৈত্যের মাথায় হাতুড়ি মেরেছিলেন আমিই সেই দৈত্য। সে হাতুড়ি আমার মাথায় একটুও লাগে নি। আমি আগে থেকে মাথা বাঁচাবার জন্য এক মায়া পাহাড়ের আড়াল দিয়েছিলাম—ওই দেখুন আপনার হাতুড়িতে তার কি দুর্দশা হয়েছে।”

 থর্‌ যখন এসব ফাঁকির কথা শুনলেন—তখন তিনি রেগে কাঁপতে লাগলেন। হাতুড়িটাকে মাথার উপরে তুলে বোঁ বোঁ করে ঘুরিয়ে তিনি যেই সেটা ছুঁড়তে যাবেন, অমনি দেখেন—কোথায় দৈত্য, কোথায় পুরী—চারদিকে কোথাও কিছু নাই!

 মনের রাগ মনে মনেই হজম করে থর্‌ সেদিন বাড়ি ফিরলেন।

সন্দেশ—১৩২১


হারকিউলিস

 মহাভারতে যেমন ভীম, গ্রীস দেশের পুরাণে তেমনই হারকিউলিস। হারকিউলিস দেবরাজ জুপিটারের পুত্র কিন্তু তাঁহার মা এই পৃথিবীরই এক রাজকন্যা, সুতরাং তিনিও ভীমের মতো এই পৃথিবীরই মানুষ, গদাযুদ্ধে আর মল্লযুদ্ধে তাঁহার সমান কেহ নাই। মেজাজটি তাঁহার ভীমের চাইতেও অনেকটা নরম, কিন্তু তাঁহার এক-একটি কীর্তি এমনই অদ্ভুত যে, পড়িতে পড়িতে ভীম, অর্জুন, কৃষ্ণ আর হনুমান এই চার মহাবীরের কথা মনে পড়ে।

 হারকিউলিসের জন্মের সংবাদ যখন স্বর্গে পৌঁছিল, তখন তাঁহার বিমাতা জুনো দেবী হিংসায় জ্বলিয়া বলিলেন, “আমি এই ছেলের সর্বনাশ করিয়া ছাড়িব।” জুনোর কথামত দুই প্রকাণ্ড বিষধর সাপ হারকিউলিসকে ধ্বংস করিতে চলিল। সাপ যখন শিশু হারকিউলিসের ঘরে ঢুকিল, তখন তাহার ভয়ঙ্কর মূর্তি দেখিয়া ঘরসুদ্ধ লোকে ভয়ে আড়ষ্ট হইয়া গেল, কেহ শিশুটিকে বাঁচাইবার জন্য চেষ্টা করিতে পারিল না। কিন্তু হারকিউলিস নিজেই তাঁহার দুইখানি কচি হাত বাড়াইয়া সাপ দুটার গলায় এমন চাপিয়া ধরিলেন যে, তাহাতেই তাদের প্রাণ বাহির হইয়া গেল। জুনো বুঝিলেন, এ বড় সহজ শিশু নয়!

 বড় হইয়া হারকিউলিস সকল বীরের গুরু বৃদ্ধ চীরণের কাছে অস্ত্রবিদ্যা শিখিতে গেলেন। চীরণ জাতিতে সেণ্টর—তিনি মানুষ নন। সেণ্টরদের কোমর

দেশ-বিদেশের গল্প
৮৫