পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-প্রথম খণ্ড.djvu/৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হারকিউলিসের সৎমা জুনো দেবী দেখিলেন, নেহাৎ সহজেই বুঝি এবারের কাজটা উদ্ধার হইয়া যায়। তিনি নিজে এসেজন সাজিয়া এসেজন দলে ঢুকিয়া, সকলকে কুমন্ত্রণা দিতে লাগিলেন। তিনি বলিলেন, “এই যে লোকটি রানীর কাছে অলংকার ভিক্ষা করিতে আসিয়াছে ইহাকে তোমরা বড় সহজ পাত্র মনে করিও না। আসলে কিন্তু, এ লোকটা আমাদের রানীকে বন্দী করিয়া লইয়া যাইতে চায়। অলংকার-টলংকার ও-সকল মিথ্যা কথা—কেবল তোমাদের ভুলাইবার জন্য।”

 তখন সকলে রুখিয়া একেবারে মার মার শব্দে হারকিউলিসকে আক্রমণ করিল। হারকিউলিস একাকী গদা হাতে আত্মরক্ষা করিতে লাগিলেন। অনেকক্ষণ যুদ্ধের পর এসেজনরা বুঝিল, হারকিউলিসের সঙ্গে পারিয়া উঠা তাহাদের সাধ্য নয়। তখন তাহারা রানীর চন্দ্রহার হারকিউলিসকে দিয়া বলিল, “যে অলংকার তুমি চাহিয়াছিলে, এই লও। কিন্তু তুমি এদেশে আর থাকিতে পাইবে না।” হারকিউলিসের কাজ উদ্ধার হইয়াছে, তাঁহার আর থাকিবার দরকার কি? তিনি তখনই তাহাদের নমস্কার করিয়া ফিরিয়া আসিলেন।

 ইউরিসথিউস্‌ মহা সন্তুষ্ট হইয়া বলিলেন, “হারকিউলিস! আমি তোমার উপর বড় সন্তুষ্ট হইলাম। তুমি আমার জন্য আটটি বড় কাজ করিলে, এখন আর চারিটি কাজ করিলে তোমার ছুটি। প্রথম কাজ এই যে, স্টাইমফেলাসের সমুদ্রতীরে যে বড়-বড় লৌহমুখ পাখি আছে, সেগুলোকে মারিতে হইবে।” হারকিউলিস হাইড্রার রক্তমাখা বিষাক্ত তীর ছুঁড়িয়া সহজেই পাখিগুলাকে মারিয়া শেষ করিলেন।

 ইহার পর তিনি রাজার হুকুমে গেরিয়ানিস নামে এক দৈত্যের গোয়াল হইতে তাহার গরুর দল কাড়িয়া আনিলেন। পথে ক্যাকাস্‌ নামে একটা কদাকার দৈত্য কয়েকটা গরু চুরি করিবার চেষ্টা করিয়াছিল। হারকিউলিস তাহাকে বাসা পর্যন্ত তাড়া করিয়া, শেষে গদার বাড়িতে তাহার মাথা গুঁড়াইয়া দেন।

 পশ্চিমের দেবতা সন্ধ্যাতারার মেয়েদের নামে হেস্‌পেরাইডিস্‌। লোকে বলিত, তাদের বাগানে আপেল গাছে সোনার ফল ফলে। একদিন রাজা সেই ফল হারকিউলিসের কাছে চাহিয়া বসিলেন। এমন কঠিন কাজ হারলিউলিস আর করেন নাই। ফলের কথা সকলেই জানে, কিন্তু কোথায় যে সে ফল, আর কোথায় যে সে আশ্চর্য বাগান, কেউ তাহা বলিতে পারে না। হারকিউলিস দেশ-বিদেশ ঘুরিয়া কেবলই জিজ্ঞাসা করিয়া ফিরিতে লাগিলেন, কিন্ত কেউ তার জবাব দিতে পারে না। কত দেশের কতরকম লোকের সঙ্গে তাঁহার দেখা হইল, সকলেই বলে, “হাঁ, সেই ফলের কথা আমরাও শুনিয়াছি, কিন্তু কোথায় সে বাগান তাহা জানি না।” এইরূপে ঘুরিতে ঘুরিতে একদিন হারকিউলিস এক নদীর ধারে আসিয়া দেখিলেন, কয়েকটি মেয়ে বসিয়া ফুলের মালা গাঁথিতেছে। হারকিউলিস বলিলেন, “ওগো, তোমরা হেস্‌পেরাইডিসের বাগানের কথা জান? সেই যেখানে আপেল গাছে সোনার ফল ফলে?” মেয়েরা বলিল, “আমরা নদীর মেয়ে, নদীর জলে থাকি—আমরা কি দুনিয়ার খবর রাখি? আসল খবর যদি চাও তবে বুড়োর কাছে যাও।” হারকিউলিস বলিলেন, “কে বুড়ো? সে কোথায় থাকে?” মেয়েরা বলিল, “সমুদ্রের থুড়্‌থুড়ে বুড়ো, যাহার সবুজ রঙের জটা, যাহার গায়ে মাছের মত আঁশ, যাহার হাত-পাগুলো হাঁসের মত চ্যাটাল—সেই বুড়ো যখন তীরে ওঠে তখন যদি তাহাকে ধরিতে পার, তবে সে তোমায় বলিতে পারিবে পৃথিবীর কোথায় কি আছে। কিন্তু খবরদার!

সু. স. র.—১২
৮৯