বুড়ো বড় সেয়ানা, তাকে ধরিতে পারিলে খবরটা আদায় না করিয়া ছাড়িও না।” হারকিউলিস তাহাদের অনেক ধন্যবাদ দিয়া বুড়োর খবর লইতে চলিলেন। সমুদ্রের তীরে তীরে খুঁজিতে খুঁজিতে একদিন হারকিউলিস দেখিলেন, শ্যাওলার মত পোশাক পরা কে একজন সমুদ্রের ধারে ঘুমাইয়া রহিয়াছে। তাহার সবুজ চুল আর গায়ের আঁশেই তার পরিচয় পাইয়া হারকিউলিস এক লাফে তাহার হাত ধরিয়া বলিলেন, “বুড়ো! হেস্পেরাইডিসের বাগানের সন্ধান বল, নহিলে তোমায় ছাড়িব না।” এই বলিতে না বলিতেই বুড়ো তাঁহার সামনেই কোথায় মিলাইয়া গেল, তাহার জায়গায় একটা হরিণ কোথা হইতে আসিয়া দেখা দিল। হারকিউলিস বুঝিলেন এ-সব বুড়োর শয়তানী, তাই তিনি খুব মজবুত করিয়া হরিণের ঠ্যাঙ ধরিয়া থাকিলেন। হরিণটা তখন একটা পাখি হইয়া করুণস্বরে আর্তনাদ আর ছট্ফট্ করিতে লাগিল। হারকিউলিস তবু ছাড়িলেন না। তখন পাখিটা একটা তিন-মাথাওয়ালা কুকুরের রূপ ধরিয়া তাঁহাকে কামড়াইতে আসিল। হারকিউলিস তখন তাহার ঠ্যাঙটা আরও শক্ত করিয়া চাপিয়া ধরিলেন। তাহাতে কুকুরটা চিৎকার করিয়া গেরিয়ানের মূর্তিতে দেখা দিল। গেরিয়ানের শরীরটা মানুষের মতো, কিন্তু তাহার ছয়টি পা। এক পা হারকিউলিসের মুঠোর মধ্যে, সেইটা ছাড়াইবার জন্য সে পাঁচ পায়ে লাথি ছুঁড়িতে লাগিল।
তাহাতেও ছাড়াইতে না পারিয়া সে প্রকাণ্ড অজগর সাজিয়া হারকিউলিসকে গিলিতে আসিল, হারকিউলিস ততক্ষণে ভয়ানক চটিয়া গিয়াছেন, তিনি সাপটাকে এমন ভীষণভাবে টুঁটি চাপিয়া ধরিলেন যে, প্রাণের ভয়ে বুড়ো তাহার নিজের মূর্তি ধরিয়া বাহির হইল। বুড়ো হাঁপাইতে হাঁপাইতে বলিল, “তুমি কোথাকার অভদ্র হে! বুড়ো মানুষের সঙ্গে এরকম বেয়াদবি কর।” হারকিউলিস বলিলেন, “সে কথা পরে হইবে, আগে আমার প্রশ্নের জবাব দাও।” বুড়ো তখন বেগতিক দেখিয়া বলিল, “যাহার কাছে গেলে তোমার কাজটি উদ্ধার হইবে, আমি তাহার সন্ধান বলিতে পারি। এইদিকে আফ্রিকার সমুদ্রতীর ধরিয়া বরাবর চলিয়া যাও, তাহা হইলে তুমি এটলাস দৈত্যের দেখা পাইবে। এমন দৈত্য আর দ্বিতীয় নাই। দিনের পর দিন বৎসরের পর বৎসর সমস্ত আকাশটিকে ঘাড়ে করিয়া সে ঠায় দাঁড়াইয়া আছে। এক মুহূর্ত তাহার কোথাও যাইবার জো নাই, তাহা হইলেই আকাশ ভাঙিয়া পৃথিবীর উপর পাড়িবে। মেঘের উপরে কোথায় আকাশ পর্যন্ত তাহার মাথা উঠিয়া গিয়াছে, সেখান হইতে দুনিয়ার সবই সে দেখিতে পায়। সে যদি খুশি মেজাজে থাকে, তবে হয় তো তোমার সোনার ফলের কথা বলিতে পারে।” হারকিউলিস তাঁহার গদা ঘুরাইয়া বলিলেন, “যদি খুশি মেজাজে না থাকে, তবুও সোনার ফলের কথা তাকে বলাইয়া ছাড়িব।”
সমুদ্রের বুড়োর কাছে এটলাসের খবর আদায় করিয়া হারকিউলিস তাহার কথা মতো আফ্রিকার উপকূল ধরিয়া পশ্চিম মুখে চলিতে লাগিলেন। চলিতে চলিতে কত পাহাড় নদী, কত শহর গ্রাম পার হইয়া, তিনি এক অদ্ভুত দেশে আসিলেন। সেখানে মানুষগুলো অসম্ভবরকম বেঁটে। শত্রুর ভয় তাদের এতই বেশি যে তাহাদের দেশ রক্ষার জন্য তাহারা এক দৈত্যের সঙ্গে বন্ধুতা করিয়া, তাহারই উপর পাহারা দিবার ভার রাখিয়াছে। এই দৈত্যের নাম এণ্টিয়াস—পৃথিবী তাহার মা।