কত হাজার হাজার বছর এটলাসের ঘাড়ে আকাশের ভার চাপান রহিয়াছে, শীত গ্রীষ্ম, রোদ বৃষ্টি সব সহিয়া বেচারা সেই বোঝা মাথায় রাখিয়া আসিতেছে। এতদিন পরে হারকিউলিসের কৃপায় সে একটু জিরাইয়া লইবার সুযোগ পাইল। মনের আনন্দে সে খুব খানিকটা লাফাইয়া, মাটিতে গড়াগড়ি দিয়া, তারপর লম্বা পা ফেলিয়া চক্ষের নিমেষে হেস্পেরাইডিসের বাগানে গিয়া হাজির। সেখানে ‘ড্রেগন’ মারিয়া বাগান খুঁজিয়া সোনার আপেল তুলিয়া আনিতে তাহার একটুও বিলম্ব হইল না। তখন তাহার মনে হঠাৎ এক কুবুদ্ধি জাগিল। সে ভাবিল, কেন আর মিছামিছি আকাশের বোঝা লইয়া থাকি। এই মানুষটার উপরেই এখন আকাশের ভার দিলেই হয়। এই ভাবিয়া সে হারকিউলিসকে বলিল, “ওহে পৃথিবীর মানুষ, তোমার গায়ে তো বেশ শক্তি দেখিতেছি। এখন হইতে তুমিই আকাশটাকে ঠেকাইবার ভার লও না কেন? আমি বরং তোমার রাজার কাছে আপেলগুলা দিয়া আসি!”
হারকিউলিস দেখিলেন বেগতিক! এ হতভাগা একটুক্ষণ ছুটি পাইয়া আর কাজে ফিরিতে চায় না। তিনি একটু চালাকি করিয়া বলিলেন, “তবে ভাই একটু আকাশটাকে ধর ত, আমার এই সিংহচর্মটিকে কাঁধের উপর ভালো করিয়া পাতিয়া লই।” বোকা দৈত্য তাড়াতাড়ি ফলগুলা রাখিয়া, আবার নিজের কাঁধ দিয়া আকাশটাকে আগলাইয়া ধরিল। হারকিউলিসও তৎক্ষণাৎ ফলগুলা উঠাইয়া লইয়া, দৈত্যকে এক লম্বা নমস্কার দিয়া সেখান হইতে সরিয়া পড়িলেন। দৈত্য বেচারা ব্যাপারটা কিছুই বুঝিতে না পারিয়া, ফ্যাল্ফ্যাল্ করিয়া তাকাইয়া রহিল।
এত পরিশ্রম করিয়া সোনার ফল আনিয়াও হারকিউলিসের দাসত্ব ঘুচিল না। রাজা ইউরিসথিউস্ বলিলেন, “আর-একটি কাজ তোমায় করিতে হইবে—তুমি পাতালে গিয়া যমের কুকুর সারবেরাস্কে বাঁধিয়া আন।” হারকিউলিস পাতালে গিয়া, সেই ভীষণ মূর্তি কুকুরকে ধরিয়া রাজার সম্মুখে হাজির করিলেন। তাহার তিন মাথায় তিনটি মুখ, সেই মুখ দিয়া বিষ ঝরিয়া পড়িতেছে, নাকে চোখে আগুনের মত ধোঁয়া—তাহার মূর্তি দেখিয়া ভয়ে রাজার প্রাণ উড়িবার উপক্রম হইল। তিনি একটা জালার মধ্যে ঢুকিয়া চিৎকার করিতে লাগিলেন, “ওটাকে শীঘ্র সরাইয়া লও।” হারকিউলিস তখন আবার যেখানকার কুকুর সেইখানে রাখিয়া আসিলেন।
এতদিনে হারকিউলিস তাঁর স্বাধীনতা ফিরিয়া পাইলেন। তখন তিনি নিজের ইচ্ছামত ত্রিভুবন ঘুরিয়া আরো অদ্ভুত কাজ করিয়া ফিরিতে লাগিলেন। কত বড়-বড় যুদ্ধে সাহায্য করিয়া, কত বীরত্বের কীর্তিতে যোগ দিয়া তিনি আপনার আশ্চর্য শক্তির পরিচয় দিতে লাগিলেন। পাহাড় উপড়াইয়া জিব্রাল্টার প্রণালীর পথ খুলিয়া তিনি সমুদ্রের সঙ্গে সমুদ্র জুড়িয়া দিলেন। সুন্দরী আলসেষ্টিস্ নিজের প্রাণ দিয়া স্বামীকে অমর করিতে চাহিয়াছিলেন, হারকিউলিস যমের সহিত যুদ্ধ করিয়া সেই আলসেষ্টিস্কে মৃত্যুর গ্রাস হইতে কাড়িয়া আনিলেন।
এইরূপ ঘুরিতে ঘুরিতে একদিন ইনিয়ুসের সুন্দরী কন্যা ডেয়ানিরাকে দেখিয়া হারকিউলিস তাকে বিবাহ করিতে চাহিলেন। কিন্তু, কোথা হইতে এক জলদেবতা আসিয়া তাহাতে গোল বাধাইয়া দিল। সে বলিল, “ইনিয়ুস আমাকে কন্যা দান করিবেন বলিয়াছেন, তুমি কোথাকার কে যে মাঝ হইতে দাবী বসাইতে আসিয়াছ?” তখন ডেয়ানিরার অনুমতি লইয়া হারকিউলিস জলদেবতার সহিত দ্বন্দ্বযুদ্ধ বাধাইয়া দিলেন। সে এই অদ্ভুত দেবতা, আপন ইচ্ছামত চেহারা বদলায়। প্রথমেই হারকিউ-