না। রাগে ও যন্ত্রণায় পাগল হইয়া তিনি দূতকে ধরিয়া সমুদ্রে ছুঁড়িয়া ফেলিলেন। তারপর সেণ্টরের বিষ এড়াইবার উপায় নাই দেখিয়া তিনি তাঁহার অনুচরদের ডাকিয়া বলিলেন, “তোমরা শীঘ্র কাঠ আন, আগুন জ্বাল, আমি এখন মরিতে ইচ্ছা করি।” শুনিয়া সকলে কাঁদিতে লাগিল, কেহ চিতা জ্বালাইতে প্রস্তুত হইল না। তখন তিনি আপন হাতে গাছ উপ্ড়াইয়া প্রকাণ্ড চিতা জ্বালাইয়া তাহাতে শুইলেন এবং তাঁহার বন্ধুকে বলিলেন, “তুমি যদি আমার বন্ধু হও, তবে আমার কথা শুনিয়া এই চিতায় আগুন দাও। বন্ধুতার পুরস্কার স্বরূপ আমার বিষ-মাখানো অব্যর্থ তীরগুলি তোমায় দিলাম।”
তারপর চিতায় আগুন দেওয়া হইল, দেবতারা জয়গান করিয়া তাঁহাকে স্বর্গের দেবতাদের মধ্যে ডাকিয়া লইলেন, এবং তাঁহাকে অমর করিয়া আকাশের নক্ষত্রদের মধ্যে রাখিয়া দিলেন।
অর্ফিয়ুস
নয়টি বোন ছিলেন, তাঁহারা ছন্দের দেবী। গানের ছন্দ, কবিতার ছন্দ, নৃত্যের ছন্দ, সংগীতের ছন্দ—সকলরকম ছন্দকলায় তাঁহাদের সমান আর কেহই ছিল না। তাঁহাদেরই একজন, দেবরাজ জুপিটারের পুত্র আপোলোকে বিবাহ করেন।
আপোলো ছিলেন সৌন্দর্যের দেবতা, শিল্প ও সংগীতের দেবতা। তিনি যখন বীণা বাজাইয়া গান করিতেন তখন দেবতারা পর্যন্ত অবাক হইয়া শুনিতেন।
এমন বাপ-মায়ের ছেলে অর্ফিয়ুস যে গান-বাজনায় অসাধারণ ওস্তাদ হইবেন, সে আর আশ্চর্য কি? অর্ফিয়ুসের গুণের কথা দেশ-বিদেশ রটিয়া গেল—স্বয়ং আপোলো খুশি হইয়া তাঁহাকে নিজের বীণাটি দিয়া ফেলিলেন। পাহাড়ে পর্বতে বনে-জঙ্গলে অর্ফিয়ুস বীণা বাজাইয়া ফিরিতেন আর সমস্ত পৃথিবী স্তব্ধ হইয়া তাহা শুনিত। অর্ফিয়ুসের বীণার সুরে আকাশ যখন ভরিয়া উঠিত, তখন সুরের আনন্দে গাছে গাছে ফুল ফুটিত, সমুদ্রের কোলাহল থামিয়া যাইত, বনের পশু হিংসা ভুলিয়া অবাক হইয়া পড়িয়া থাকিত।
এই রকমে দেশে দেশে বীণা বাজাইয়া অর্ফিয়ুস ফিরিতেছেন। এমন সময় একদিন ইউরিডিস নামে এক আশ্চর্য সুন্দরী মেয়ে তাঁহার বীণার সুরে মোহিত হইয়া দেখিতে আসিলেন, কে এমন সুন্দর বাজায়। ইউরিডিসকে দেখিবামাত্র অর্ফিয়ুসের মন প্রফুল্ল হইয়া উঠিল, তাঁহার আনন্দ বীণার ঝংকারে ঝংকারে আকাশকে মাতাইয়া তুলিল। তন্ময় হইয়া সংগীত শুনিতে শুনিতে ইউরিডিসের মন একেবারে গলিয়া গেল। তারপর ইউরিডিসের সঙ্গে অর্ফিয়ুসের বিবাহ হইল; মনের আনন্দে দুইজনে দেশ-দেশান্তরে বেড়াইতে চলিলেন।