হলুদ চাঁদ
“বুবুদিদি, তুই চাঁদ দেখেছিস?”—উমা ডেকে বলে দিদিরে তার,—
ঝিমি ঝিমি সাঁঝে ঝিঁঝির আসরে রিমি ঝিমি ঝিমি বাজে সেতার।
নিঝ্ঝিম পাড়া,—হিম্সিম্ লাগে—ঢিমে হিম-হাওয়া গান শোনায়,
রাঙা চাঁদা-মামা ওই দিল হামা, সাঁঝ-আকাশের এক কোণায়।
“চাঁদ দেখে যাও,—ঈস্ কত বড়!” উমা ডাকে—“দিদি, দেখবি আয়!
মহুয়ার ডালে পাতার আড়ালে ওই বুঝি মামা আটকে যায়!”
মা ডেকে বলেন-“উমা, আয় আয়, লাগাস্ নে হিম, খেয়ে যা দুধ।”
উমা বলে—“মাগো, আগে দেখে যাও,—চাঁদের যে আজ গায়ে-হলুদ।
চাঁদা-মামা সে তো তোমারি ভাই মা, তাই মা তোমায় খোঁজে বুঝি,
পৃথিবীর যত বোন আছে তার—আজকের সাঁঝে ফেরে খুঁজি।
—এসো মা দৌড়ে—বুবদিদি, আয়—চাঁদা-মামা দেয় হাতছানি।”
ঝিলিমিলি আলো বিলিয়ে বিলিয়ে মেতে ওঠে যেন রাতখানি।
ধোঁয়া জ’মে আসে এপাশে ওপাশে, কুটিরে কুটিরে জ্বলে আগুন—
জড়োসড়ো হয়ে জমে চারিপাশে চাষাদের ছেলে কেঁপে যে খুন।
চাষার ছেলের গান ধরে আর চাষার মেয়েরা ধরিছে ভুল,—
চাষার মেয়েরা নাচে দুলে দুলে—চাষার ছেলেরা হেসে আকুল।
সুর ভেসে আসে হাওয়ায় হাওয়ায়, হাসি আর গান শোনা যে যায়,
দাওয়ায় দাওয়ায় গরিব চাষীরা সুখ-টান টানে ডাবা-হুঁকায়।
দূরে কোথা জানি মাদল বাজে রে—হয় বুঝি কোথা ঝুমুর-নাচ—
আলোর রসেতে চুর্ চুর্ হ’ল মহুয়ার শাখা, ডুমুর-গাছ।
পিছনে আঁধার ডাহিন বাঁ-ধার ফিকে ক’রে আনে হলুদ-চাঁদ,
কালোর ঝালর তুলে ঝল্মল হেসে ওঠে যেন দূরের বাঁধ।
ঝাউ-শাখা দোলে বায়ু-হিল্লোলে—লাউএর মাচায় আলোর ঢেউ,
এদিকে আঁধার ওদিকে আলোক—এমন দেখেছ তোমরা কেউ?