পাতা:সুনির্মল বসুর শ্রেষ্ঠ কবিতা.pdf/৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শ্রেষ্ঠ কবিতা
৪৩

নিশুত্, রাতে পেঁচার ডাকে আঁৎকে উঠে’ ভয়ে
আমার বুকে মুখ লুকাত জড়সড় হয়ে।
বৃষ্টি যখন পড়ত ঝরে, আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে
চুপটি ক’রে বসতাম মা তোরই দুটি পাশে,—
বলতি কত পরীর কথা, ডাইনীবুড়ির কথা,
সুয়োর ঘরে দুয়ো-রাণীর মনের নিবিড় ব্যথা।
রাজপুত্রের শিকার করা পক্ষিরাজে চেপে,
শাঁকচুন্নীর গল্প শুনে উঠত গা-টা কেঁপে।
বুঝত না মা খোকাটি তোর, তাকাত তোর পানে,
অবাক হয়ে শুনত কেবল,—ভাবত কী কে জানে!

ঐ যে মাগো ঘরের কোণে খোকার ঠেলাগাড়ি,
ঐ যে খোকার ছোট্ট ছাতা, রং-করা মশারি;
ঐ পিঁড়িতে বসে খোকা নিত্যি খাবার খেত—
আমার হাতে ভাত খেয়ে সে কতই আমোদ পেত।
ঐ মা খোকার শেলেট পুঁথি, জানত না তো পড়া,
মুখে মুখেই শিখিয়েছিলাম মজার মজার ছড়া।
পড়ার সময় শেলেট নিয়ে বসত মিছিমিছি,
ইচ্ছামত আপন মনে টানত হিজিবিজি।

পোঁট্ল বেঁধে রেখেছি তার জিনিস রাশি-রাশি—
লাট্ট, গুলি, কাঠের লাঠি, কৌটো, ভাঙা বাঁশি,
ভাঙা পুতুল, রাঙা শিশি, ঠ্যাং-ভাঙা এক ঘোড়া,
তেঁতুলবীচি, মাটির ঢেলা, ন্যাকড়া ছেঁড়া-খোঁড়া।
এম্‌নি কত হরেক রকম জিনিস আজে-বাজে
পোঁট‍্লা-বাঁধা যত্নে মাগো আমার কাছে আছে।
খোকার জিনিস দিয়েছি সব যত্ন করে রেখে,—
কান্না আসে আজকে মা ঐ জিনিসগুলো দেখে।