পাতা:সেই সব শহীদেরা - পিনাকী বিশ্বাস (২০২২).pdf/১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গেঁথে গেঁথেই গড়ে ওঠে সমষ্টি; তাই ব্যক্তিকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করা চলে না। বিপ্লব জনগণের উৎসব, সেই উৎসবে তাঁদের উজ্জ্বল উপস্থিতি উপেক্ষা করা সম্ভব নয় কিছুতেই।

 এই সংকলন সে-রকমই কয়েকজন ব্যক্তির কথা। এমন ব্যক্তি যারা নিজের ব্যক্তিসত্তাকে বিলীন করে দিয়েছিলেন সমষ্টির মধ্যে, সমষ্টির মুক্তির জন্যই লড়াই করেছিলেন তারই অংশ হয়ে নিজেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দা করে না রেখে ভিড়ের মধ্যে মিশে গিয়েছিলেন তাঁরা, তবু এক অপরিমেয় স্বাতন্ত্র্যে তাঁরা উজ্জ্বল। সেই উজ্জ্বলতা অন্যকেও দীপ্তি দেয়। তাঁদের লড়াই এক ধরনের নয়। এই সংকলনে যাদের কথা বলা হয়েছে তাঁরা কেউ লড়াই করেছিলেন বিদেশী সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে, কেউ দেশীয় সামন্ততন্ত্রের বিরুদ্ধে, কেউ দেশী-বিদেশী পুঁজির আক্রমণের বিরুদ্ধে, আর কেউ বা যে-কোনো ধরনের শোষণের মোক্ষম হাতিয়ার কুসংস্কারের বিরুদ্ধে। এঁরা কেউ মৃত্যুবরণ করেছেন রণাঙ্গনে, কেউ জেলখানায়, কেউ বা জনগণের সংগ্রামের সাথী হয়ে দুস্তর পথ পাড়ি দিতে গিয়ে নিজের কথা ভাবতে সময় পাননি বলে দুরারাগ্যে ব্যাধির কবলে পড়ে। তবু এক জায়গায় তাঁরা এক, তারা জনগণের পক্ষে, আর এই পক্ষাবলম্বন তাঁদের থাকতে দেয়নি কোনো নিশ্চিন্ত সুখী গৃহকোণে, টেনে এনেছে ঝড়ো হাওয়ার মধ্যে। শেষ পর্যন্ত আরামের শয্যায় নয়, তাদের মৃত্যু হয়েছে ফাঁসির দড়িতে পুলিশ-মিলিটারি বা আততায়ীর বুলেটে অত্যাচারে চিকিৎসার অপ্রতুলতায়। কেউ মারা গেছেন ময়দানে, কেউ ধানক্ষেতে, কেউ শহরের ফুটপাথে, কেউ গোপন আস্তানায়, কেউ কারাগারে। তবু তারা সকলে মিলে রচনা করেছেন এক মহাকাব্য। এই সংকলন সেই মহাকাব্যটিকে ফিরে পড়ার এক সূচনাবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।

 এই সংকলনের সব লেখা এক ধরনের না। কোনো লেখা শুধু শহীদের পরিচয় ও কাজের বিবরণই আছে, আবার কোনো লেখায় আলোচ্য শহিদের কাজের সঙ্গে তাঁর মতাদর্শের বিশেষণও আছে। মনাযোগেী পাঠক অনুযোগ করতে পারেন অনেকর কথা আসেনি বলে, সে-অপূর্ণতার কথা মেনে নিতেই

১২