এই আন্দোলন ছিল ইংরেজ সরকার, নীলকর ও দেশীয় জমিদারদের সম্মিলিত শোষণের বিরুদ্ধে মরণপণ সংগ্রাম, যার পথিকৃৎ ও প্রথম শহীদ বিশ্বনাথ সর্দার।
ব্রিটিশ সরকার ও তাদের তৎকালীন তাঁবেদার বুদ্ধিজীবীরা সেদিন কলম ধরেছিলেন নীলকরদের পক্ষে, বিদ্রোহীদের হেয় করার পাশাপাশি সরকারের প্রশস্তি রচনায় রত হয়েছিলেন তাঁরা। শতাব্দী পার হয়ে গেছে। শাসকের চরিত্র যেমন বদলায়নি তেমনি আজো সরকারী বেতনভুক, উচ্ছিষ্টভোগী বুদ্ধিজীবীমহল নির্লজ্জভাবে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বিরোধিতা করে চলেছেন। আজকের শাসকবর্গও শঙ্কিত, বামপন্থার মুখোশের আড়ালে, উন্নয়নের নামে জল, জঙ্গল, জমি থেকে মানুষের অধিকারকে হরণ করতে ফ্যাসিবাদী কায়দায় দমনপীড়ন নামিয়ে আনছে প্রতিনিয়ত। আজকের মতোই সেদিন অবর্ণনীয় অত্যাচার, নিরবিচ্ছিন্ন শোষণের প্রতিবাদে বাংলার কৃষক মহাপরাক্রান্ত ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে পিছপা হয়নি। লড়েছে, মরেছে, পাল্টা মার দিয়েছে।
বাংলায় বেশ কয়েকটি পর্যায়ে নীলবিদ্রোহ সংঘটিত হয়। ১৭৭৮-১৮০০, পরবর্তীতে ১৮৩০-৪৮ এবং ৫৭-এর মহাবিদ্রোহের পরে বিভিন্ন অঞ্চলে। বিশ্বনাথ ছিলেন একদম প্রথম পর্বের নেতা। তাঁর অসাধারণ সাংগঠনিক ক্ষমতা ও সাহসের ফলে নদীয়াকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা আন্দোলন গণবিদ্রোহের আকার নেয়। প্রথমেই শান্তিপুরের তাঁত শ্রমিকদের উপর নীলকরদের অত্যাচারের প্রতিশোধ নেন বিশ্বনাথ। তাঁর একের পর এক সুসংগঠিত আক্রমণে ধুলিস্মাৎ হয়ে যায় অত্যাচারের প্রাণকেন্দ্র খালবোয়ালিয়া, নিশ্চিন্দিপুর, বাঁশবেড়িয়ার নীলকুঠিগুলি। নায়েব, গোমস্তা মুৎসুদ্দিদের ঝাড়ে বংশে উৎখাত করে বিদ্রোহীরা সন্ত্রস্ত করে তোলেন শাসকবর্গকে। উপর্যুপরি রাজনৈতিক ডাকাতির ফলে নীলচাষ প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। নদীয়া ইন্ডিগো কনসার্নের মাথা স্যামুয়েল ফেডা নামক এক নীলকরের জুলুমে অতিষ্ঠ মানুষেরা বিশ্বনাথের নেতৃত্বে ১৮০৮
১৬