সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর রাত্রে তাঁর কুঠী আক্রমণ করে। ফেডী ও এক ইউরোপিয়ান যাজক মিঃ লিডিয়ার্ডকে বন্দী করে সারা বাড়ি লুঠ হয়। ফেডীকে হত্যা করতে বদ্ধপরিকর ছিলেন গ্রামবাসীরা কিন্তু বিশ্বনাথের দয়ায় সে প্রাণভিক্ষা চেয়ে মুক্তি পায়। এর কয়েকমাস বাদেই ফেডী, ইংরেজ সেনাপতি ব্ল্যাক ওয়ারের সেনাবাহিনীর সাহায্যে ও নদীয়ার জেলাশাসক ইলিয়টকে সঙ্গে নিয়ে বিশ্বনাথকে ঘেরাও করে ফুলিয়ার জঙ্গলে। সাথীদের প্রাণ রক্ষার্থে দলনেতা বিশ্বনাথ সংঘর্ষ এড়িয়ে যান ও গ্রেপ্তার বরণ করেন। বিচারের প্রহসন শেষ করতে সরকার বেশি দেরী করেনি। তাঁকে ফাঁসী দেওয়ার পর ‘সুসভ্য’ ইংরেজ সরকার ঘৃণ্যতম মানসিকতার পরিচয় দেয়। এই মহাবিপ্লবীর মৃতদেহটি লোহার খাঁচায় পুরে আসাননগরের একটি গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয় ও চিল, শকুন দিয়ে খাওয়ানো হয়। ভীত শাসকরা চেয়েছিল বিদ্রোহীর পরিণতি প্রত্যক্ষ করে বাকি কৃষকরাও শঙ্কিত হোক। বিশ্বনাথের মা, পুত্রের কঙ্কালটি জলে ভাসিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। কর্তৃপক্ষ কর্ণপাত করেনি। অধুনা আসাননগর গ্রামের সেই মাঠটি ফাঁসিতলার মাঠ বলে খ্যাত।
মার্কসবাদী ঐতিহাসিক সুপ্রকাশ রায় লিখেছেন “অসহায় জনগণের, কৃষকের সম্মুখে দন্ডায়মান হইয়া তাহাদিগকে অভয় ও বাঁচিবার জন্য সংগ্রামের প্রেরণাদানের উদ্দেশ্যে যাহারা একক শক্তিতে বিদেশী নীলকর দস্যুদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের পতাকা উড্ডীন করিয়ছিলেন, তাহাদের মধ্যে বিশ্বনাথ সর্দার প্রথম ও শ্রেষ্ঠ স্থানের অধিকারী।”
শহীদ বিশ্বনাথের জীবনীকার বিমলেন্দু কয়াল চমৎকার বলেছেন “শেরউড বনভূমির দস্যু রবিনহুড যে ইংরেজদের জাতীয় জীবনে মহিমায় মহিমান্বিত হইয়াছেন, সেই ইংরেজ ব্রাহ্মণীতলার বনভূমির বাঙ্গালী বীরকে দস্যু আখ্যায় আখ্যাত করিয়া হীনভাবে হত্যা করিয়াছে।”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য শিশুসাহিত্যিক ধীরেন্দ্রলাল ধর তাঁর “নীলকর এলো দেশে উপন্যাসে বিশ্বনাথকে পূজারী ব্রাহ্মণ হিসেবে চিত্রায়িত করেছেন, বাস্তবে তিনি ছিলেন কৃষক সম্প্রদায়ভুক্ত।
১৭