পাতা:সেই সব শহীদেরা - পিনাকী বিশ্বাস (২০২২).pdf/২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দিকটি সযত্নে এড়িয়ে, ধরপাকড়ের মাহেন্দ্রক্ষণে ভেগে পড়েই তোমরা বিপ্লবী হয়েছ। নইলে যে শাসকশ্রেণীর সাংস্কৃতিক ঠিকাদারী পাওয়া যায় না।

 কিন্তু কে এই মানুষটি; কে স্বপন দাশগুপ্ত, যার জন্য আমাদের শোকগ্রস্ত হতে হবে? সত্যিই তো, ইনি এমন কোনো মহান কমিউনিস্ট নেতা ছিলেন না যাঁর মৃত্যুতে লক্ষ টাকার ফুল, আলো, গ্লোসাইন-বোর্ড সহযোগে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা হবে। হবে ব্যয়বহুল পারলৌকিক শ্রাদ্ধানুষ্ঠান, শোকবার্তা আসবে দেশ-বিদেশ থেকে, নিদেনপক্ষে ‘চব্বিশঘণ্টা’ চ্যানেলে চ্যানেলে বেজে যাবে ইন্টারন্যাশনাল।

 স্বাধীনতা সংগ্রামী শিশির কুমার দাশগুপ্ত ও মনিকা দাশগুপ্তের সন্তান স্বপন দাশগুপ্তের জন্ম ১৯৪৯ সালের ১৯শে এপ্রিল দিল্লিতে। পিতা ছিলেন অনুশীলন সমিতির সঙ্গে যুক্ত। স্বপন দাশগুপ্তর পথচলা শুরু ৬৬-র বিখ্যাত খাদ্য আন্দোলন থেকে, তরুণ বয়সে নকশালবাড়ির দুরন্ত আহ্বানে সাড়া দিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালে গ্রেপ্তার হন। প্রমাণাভাবে মুক্তি পান। CPI(ML) গোষ্ঠী ভাঙনের পর ১৯৭৩ সালে যোগ দেন মহেন্দ্র সিং গোষ্ঠীর সাথে। চিনতে পারছেননা বুঝি? আচ্ছা আপনারা তো আশুতোষ মজুমদারকে চেনেন। যাদবপুরের সেই মেধাবী ছাত্রটি যে কিনা কবিতা লিখত, যে কিনা বন্ধুদের বাঁচাতে বুক পেতে দেয় মিলিটারীর উদ্যত রাইফেলের সামনে। ১৯৭১-র ১০ই মার্চ আশু শহীদ হন। অ্যাই! চিনেছেন তো। স্বপন দাশগুপ্ত ছিলেন সেই দ্রোহকালের উজ্জ্বল তরুণ আশুর অভিন্নহৃদয় সাথী। প্রথমদিকে ১৯৭২ সালে জয়েন করেন Central Exise এ উড়িষ্যায়, ‘৭৪-এ সব ছেড়ে আত্মনিয়োগ বিপ্লবী রাজনীতিতে। ‘৮০ সালে পিতার মৃত্যুর পর জীবনযুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত অকৃতদার মানুষটির উপর অনেক দায়িত্ব এসে পড়ে। কোর্ট টাইপিস্ট থেকে বোম্বে ডাইং-এর স্টেনো এমন অজস্র কাজ তিনি করেছেন তবু আপোষের পথে কখনো হাঁটেননি। বরাবর যুক্ত থেকেছেন বামপন্থী বিভিন্ন গণসংগঠনের সাথে। বন্দীমুক্তি আন্দোলন থেকে শুরু করে টালিনালা বস্তি উচ্ছেদ বিরোধী সংগ্রামে তিনি ছিলেন প্রথম সারির কর্মী

২২