সেই ধারা সতত প্রবহমান এবং তার প্রধান লক্ষ্যবস্তু শ্রমিক কৃষকের নেতৃত্বে যাবতীয় গণ-আন্দোলন। অগ্নিযুগের বিপ্লবী হয়ে গেছেন ‘সন্ত্রাসবাদী ডাকাত আর কৃষক বিদ্রোহীরা ‘দাঙ্গাবাজ লুঠেরা’!
এমনই এক অভিযোগ আনা হয় ওয়াহাবী আন্দোলনকারী মীর নিসার আলি ওরফে তিতুমীরের বিরুদ্ধে। একথা অস্বীকার করা যাবে না যে, তিতুমীরের আন্দোলন প্রাথমিক পর্বে ইসলাম ধর্মের সংস্কার ও মুসলিমদের উন্নতি সাধনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, যদিও এসব করতে গিয়ে তাঁকে হিন্দুদের বিরুদ্ধে তথাকথিত ‘জেহাদ’ ঘোষণা করতে হয়নি, উপরন্তু তাঁর অসাম্প্রদায়িক মনোভাব সমস্ত শ্রমজীবী মানুষকে আকৃষ্ট করেছিল। কুমুদ নাথ মল্লিক তাঁর ‘নদীয়া কাহিনী’ শীর্ষক গ্রন্থে আন্দোলনকে ‘ধর্মোন্মাদ মুসলমানের কাণ্ড’ বলেছেন। সমাচার চন্দ্রিকা পত্রিকায় তিতুর বিদ্রোহকে হিন্দু বিরোধী মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বলা হয়েছে। ঐতিহাসিক বিহারীলাল সরকার ইংরেজ প্রশস্তি করে লিখেছেন ‘তিতু বড়ই দুর্বুদ্ধি তাই তিতু বুঝিল না ইংরেজ কত ক্ষমাশীল, কত করুণাময়।” তাঁর ভাষায় বারাসাত বিদ্রোহ হিন্দু বিদ্বেষী একটি আন্দোলন মাত্র। বিহারীলালের ইংরেজ প্রীতি সর্বজনবিদিত সুতরাং এসবে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই কিন্তু বিপ্লবী ভূপেন্দ্রনাথ দত্তের মতো চিন্তাবিদও যখন একই বক্তব্য পেশ করেন তখন তা নিঃসন্দেহে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। যে শাসনব্যবস্থা মুখ্যত অবিচার আর শোষণের ওপর প্রতিষ্ঠিত সেখানে শ্রমজীবী মানুষ জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে খুনী রাষ্ট্রকাঠামোকে উৎখাত করতে উদ্যত হয়েছে, পরাজয় নিশ্চিত জেনেও লড়েছে এর সত্যতা যুগে যুগে প্রমাণিত। ভারতের ওয়াহাবী আন্দোলনও এর ব্যতিক্রম নয়। W. Cantwell Smith ওয়াহাবী আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন মুসলিম পরিচালিত এই আন্দোলন ছিল হিন্দুদের সমর্থনপুষ্ট এবং কিছু সামন্তরাজা ও ব্রাহ্মণ পন্ডিতদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল এর পিছনে দূরদর্শী তিতুমীর উপলব্ধি করেন নিরন্ন, অশিক্ষিত মানুষকে প্রথম অবস্থায় একজোট করতে হলে ধর্মীয় দিশা দেখাতেই হবে, সেভাবেই তাঁর সংগ্রামে ধর্মীয় ধ্বনি ব্যবহৃত হয়েছিল বটে তবে তা সাম্প্রদায়িক হয়ে দাঁড়ায়নি।
২৫