পাতা:সেই সব শহীদেরা - পিনাকী বিশ্বাস (২০২২).pdf/২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পুঁজিবাদী শিল্পবিকাশের পূর্বে পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশেই একমাত্র ধর্মীয় ধ্বনির মাধ্যমেই জনসমাবেশ গড়ে তোলা সহজ ছিল। জার্মানীতে কৃষক বিদ্রোহের নেতা মুয়েঙ্গার বা সাঁওতাল বিদ্রোহে সিধু-কানহু একইভাবে শোষিত জনগণকে একত্রিত করেছিলেন। মহাবিদ্রোহের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ জ্বলে ওঠার কারণটি হয়তো ধর্মীয় কিন্তু যখন তা দাবানল আকারে ছড়িয়ে পড়ে তখন পুরোপুরি রাজনৈতিক রূপ পরিগ্রহণ করে। মুক্তমনের বিচারে ধর্মীয় স্লোগানের বিষয়টি রণকৌশলের অঙ্গ হিসাবেই দেখা যেতে পারে।

 স্বদেশী চাটুকারেরা স্বীকার না করলেও Smith তাঁর Modern Islam in India গ্রন্থে ব্যাপারটাকে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় শ্রেণীসংগ্রাম হিসাবেই দেখিয়েছেন।

 "The Struggle was a pure class struggle and the communalist confusion of the issue evaporated. The movement made use of a religion's ideology, as class struggle in pre-industrialistic society have often done, but though religious it was not communalist” [page-189]

 আসলে অত্যাচারী জমিদার কৃষ্ণদেব রায়ের বিরুদ্ধে তিতুমীরের কড়া অবস্থান অভিযোগকারীদের হাতিয়ার হয়ে গিয়েছে। আন্দোলনের ব্যপকতা থেকে বোঝা যায় শুধু একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের ভাবাবেগ সঙ্গী করে এতবড় বিদ্রোহ সংঘটিত করা অসম্ভব। এসময় তিনি কিছু হিন্দু জমিদারের সহানুভূতি পেয়েছিলেন। ভূষণার জমিদার মনোহর রায় তিতুমীরের পক্ষাবলম্বন করে কৃষ্ণদেবকে পত্র দেন ও তাঁকে নীলকরদের সাথে হাত মিলিয়ে তিতুমীর অনুগামীদের ওপর অর্থনৈতিক কর বসানো থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ জানান। হিন্দু জমিদারের বিরুদ্ধে লড়াইকে যারা হিন্দুদের বিরুদ্ধে লড়াই বলে চালাতে চান, তাদের জানা উচিত তৎকালীন ভারতবর্ষের মতো সামন্ততান্ত্রিক ও ঔপনিবেশিক শোষণে জর্জরিত দেশে মানুষের ধর্মও শোষকশ্রেণীর শিকার হয় এবং জনগণের সংগ্রাম ধর্মীয় বা অন্য যে কোনো কারণেই শুরু হোক না কেন পরবর্তীতে রাজনৈতিক সংগ্রামে রূপান্তরিত হয়।

২৬