পাতা:সেই সব শহীদেরা - পিনাকী বিশ্বাস (২০২২).pdf/২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হতে বাধ্য। উল্লেখযোগ্য হল, রমেশচন্দ্র মজুমদার মশাই কিন্তু সমালোচনার পাশাপাশি তিতু পরিচালিত বিদ্রোহকে দেশীয় সামন্ত ও নীলকর গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে একটি কৃষক আন্দোলন হিসাবে দেখেছেন। একই সঙ্গে W.W. Hunter তাঁর The Indian Musalmans গ্রন্থে ধর্মীয় বিষয়ে ওয়াহাবীদের সঙ্গে ফরাসী বিপ্লবের ‘অ্যানাব্যাপটিস্ট’ এবং রাজনৈতিক বিষয়ে কমিউনিস্ট ও বিপ্লবী সাধারণতন্ত্রীদের সঙ্গে তুলনা করেছেন। যদি আন্দোলনের অভিমুখ শুধু হিন্দু বিদ্বেষী হতো তবে ধুরন্ধর ইংরেজ সরকার তাতে অতি সহজেই সাম্প্রদায়িকতার বিষ ঢুকিয়ে ধ্বংস করে দিত, বাঁশের কেল্লা ওড়াতে কামান দাগতে হতো না! ধর্মসংস্কারের দিকটি দেখলে বোঝা যাবে তিতুমীর ছিলেন সেই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে কিছুটা হলেও এগিয়ে থাকা মানুষ যিনি সাহসের সঙ্গে কুসংস্কারের বিরোধীতা করেন। ওয়াহাবী আন্দোলনের কুশীলব সৈয়দ আহমেদের (১৭৮৬-১৮৩১) সাথে দ্বিতীয় সাক্ষাতের পর সংগঠন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি যে প্রচারকার্য চালান তার মধ্যে ছিল “পীর পয়গম্বর মানিতে নাই, শ্রাদ্ধ শান্তির প্রয়োজন নাই, মন্দির মসজিদ তৈয়ার করিতে নাই, সুদ লইতে নাই” ইত্যাদি। স্বাভাবিকভাবে এতে মোল্লা ও ধনী মুসলমানের ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। ধর্মভেদে শাসক কিংবা দালালের চরিত্রগত হেরফের হয় না, তারা সমবেতভাবে তিতুর বিরোধীতায় নেমে পড়ে। এবং উভয় সম্প্রদায়ের জমিদারেরা তিতুকে পরাভূত করতে উদ্যোগী হয়। একাজে সর্বাগ্রে এগিয়ে আসে কৃষ্ণদেব রায়, কালীপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়, দেবনাথ রায় প্রমুখ। অপরপক্ষে তিতুর বক্তৃতা শোনার জন্য দলে দলে হিন্দু মুসলমান উপস্থিত হতো। ইসলামে পূর্ণ বিশ্বাস এবং হিন্দু কৃষকদিগকে সাথে নিয়ে ইংরেজ মদতপুষ্ট জমিদার ও নীলকর খতম ছিল বক্তৃতার মূল প্রতিপাদ্য।

 যুদ্ধের চরিত্র ও পুরাতনপন্থী মুসলিমদের প্রতি শত্রুতা প্রমাণ করে আন্দোলনের অভিমুখ হিন্দুবিদ্বেষী মনে হলেও তা ছিল সামন্তবিদ্বেষী। যেহেতু জমিদারদের বেশিরভাগই হিন্দু আর কৃষকদের বেশিরভাগ মুসলমান তাই ‘অর্ধসত্যের ফেরীওয়ালারা’ তথ্যের চাইতে অনুমানের ওপর বেশি নির্ভর করেন। অথচ এই বিহারীলালই লিখে গেছেন তিতু আপন ধর্মমত প্রচার

২৭