করেছিলেন। সে ধর্মমত প্রচারে পীড়ন তাড়ন ছিল না। লোকে তার বাগবিন্যাসে মুগ্ধ হয়ে, তাকে পরিত্রাতা মনে করে তার মতাবলম্বী হয়েছিল। তিতু প্রথম শোনিতের বিনিময়ে তার প্রচার করতে চায়নি। জমিদার কৃষ্ণদেবের জরিমানার ব্যবস্থা তার শান্ত প্রচারে হস্তক্ষেপ করলো। তারাগুনিয়ার জমিদার রামনারায়ণ, নগরপুরের গৌরপ্রসাদ চৌধুরী এবং কৃষ্ণদেব রায় তিতুমীরের প্রভাব ক্ষুন্ন করার অভিপ্রায়ে বিক্ষুব্ধ হানাফি মুসলমান কৃষকদেরও কাজে লাগাতে চেষ্টা করেছিল।
গৌতম ভদ্র অভিমত প্রকাশ করেছেন তিতুর মূল সামাজিক আবেদন ছিল গ্রামের নিম্নকোটির মানুষদের কাছে। যারা জাতিতে তারা যুগী, জোলা আর কৃষক। এদের অনেকেরই উপাধি ছিল কারিগর। এদের মধ্যে অনেকে তাঁত বুনতো আর নগণ্য রায়ত ছিল। মুসলমান সমাজে অন্ত্যজদের মধ্যে তিতুর প্রচার খুবই কার্যকর হয়েছিল। তিতুর নিজের সামাজিক মান মর্যাদা ছিল কিন্তু তার দলে সম্পন্ন লোকদের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। কলভিন বলেছেন, যাদের কিছু হারাবার আছে তারা তিতুর দলে যোগ দিয়ে ঝুঁকি নিতে চায়নি। দুর্গাচরণ রক্ষিতের সংগৃহীত তথ্য থেকে জানা যায় হিন্দুদের মধ্যে যুগীরা সে শ্রেণীস্থ মুসলমানদের মধ্যে জোলারাও সেই শ্রেণীস্থ। বস্ত্রায়ন তাদের প্রধান উপজীবীকা। তারা সকলেই নির্ধন। যুগী আর জোলাদের জল সাধারণে স্পর্শ করে না। এহেন লোকদের মধ্যে তিতু দল গড়েছিলেন। সুতরাং এই আন্দোলন কেবলমাত্র হিন্দুদের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়েছিল এ অতিশয়োক্তি।
যারা গো-হত্যা ইত্যাদির মতো দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনায় সাম্প্রদায়িকতার গন্ধ খুঁজে পান, ড ভূপেন্দ্রনাথ দত্তের বয়ান টেনে আনেন, তারা পুরোটা দেখছেন না বা দেখতে চাইছেন না। দত্ত লিখেছিলেন, জমিদারগণের শোষণ উৎপীড়নই তিতুমীরের ‘শান্তিপূর্ণ ধর্মসংস্কার আন্দোলনকে ব্যাপক বিদ্রোহে রূপান্তরিত করেছিল। লক্ষ্যণীয় হিন্দুদের পাশাপাশি তিতুর আক্রমণের লক্ষ্য হয়েছে অত্যাচারী মুসলিম জমিদারেরাও। এবং তা একটি নয়, একাধিক।
২৮