হত্যার কয়দিন পর নীলকর ডেভিস তিতুকে আক্রমণ করে ও পরাজিত হয়ে পলায়ন করে। আত্মবিশ্বাসী হয়ে বারাসাত থেকে বসিরহাট পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় তিনি নিজেকে বাদশাহ বলে ঘোষণা করেন। তার অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী মনোনীত হন মৈনুদ্দিন। ১৫ই নভেম্বর ম্যাজিস্ট্রেট আলেকজাণ্ডার যুদ্ধে পরাজিত হলে তিতু দ্বিগুণ উৎসাহে একের পর এক নীলকুঠি ধ্বংস করতে থাকেন। বারাসাত ও নদীয়ার বেশ কিছু এলাকায় নীলচাষ প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয় এবং উল্লসিত প্রজাগণ নীল বুনতে অস্বীকার করে, খাজনা দেওয়াও বন্ধ করে দেয়। এমনকি জেলা কালেক্টার ও জমিদারগণের সম্মিলিত বাহিনীকে সেনাপতি মাসুম নাস্তানাবুদ করেন; তার কারণ ছিল জনসমর্থন। আতঙ্কিত ব্রিটিশরাজ তিতুকে বন্দী করতে নারকেলবেড়িয়ায় সেনা প্রেরণ করেন। এর পরের ঘটনা সবার জানা, ১৮৩১ এর ১৪ই নভেম্বর বাঁশের কেল্লা ইংরেজবাহিনীর হাতে ধুলিস্যাৎ হয়। তিতু কামানের গোলায় মারা যান, সেনাপতি গোলাম মাসুমের ফাঁসি হয়। দীর্ঘ বিচারে ৩৫০ জনের বিভিন্ন মেয়াদের কারাবাস হয়েছিল।
ঐতিহাসিক নরহরি কবিরাজ বলেছেন এই আন্দোলনে ধর্ম বহিরঙ্গ মাত্র, রূপটা ধর্মের মূল বস্তু ও সার শ্রেণি সংঘর্ষ। ঐতিহাসিক প্রাবন্ধিক সুপ্রকাশ রায় ‘বারাসাত বিদ্রোহের ঐতিহাসিক অবদান' শীর্ষক রচনায় সঠিকভাবেই বলেছেন “কামানের মুখে বিদ্রোহের নায়ক তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা শুষ্ক পত্রের মতো উড়িয়া গেলেও ইহা বংশ পরম্পরায় বাঙালী জনসাধারণের চিত্তভূমিতে ভবিষ্যৎ স্বাধীনতা সংগ্রামে যে অজেয় দুর্গ রচনা করিয়া রাখিয়াছে, ইংরেজ শাসকগণ সমস্ত শক্তি নিয়োগ করিয়াও কোনোদিন তাহার ভিত্তি টলাইতে পারে নাই।” এই আন্দোলনকে শ্রেণি সংগ্রামের আখ্যা না দেওয়া গেলেও তা যে ব্রিটিশ বিরোধী কৃষক আন্দোলন ছিল তা নিয়ে সন্দেহ নেই।
বাস্তবিকই তিতুমীর ও তাঁর পূর্বসূরীদের সমস্ত আপাত ব্যর্থ কৃষক বিদ্রোহের ভস্মরাশি হতে জন্ম নিয়েছিল ১৮৫৭-এর জাতীয় মহাবিদ্রোহ যা
৩০