পাতা:সেই সব শহীদেরা - পিনাকী বিশ্বাস (২০২২).pdf/৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

অপরজনের নিরবিচ্ছিন্ন পথচলা দেশীয় শাসকদের বিরুদ্ধে। এত পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও একটা বিষয়ে তাঁদের দারুণভাবে মেলানো যায়। এরা দুজনেই মৃত্যুর আগের মুহূর্তটি পর্যন্ত ব্যয় করেছিলেন নিপীড়িত শোষিত মানুষের মুক্তির সংগ্রামে আর তাই বোধহয় দুটি নাম একসাথে এক নিঃশ্বাসে উচ্চারণ করা সার্থক।

 এবার সংক্ষেপে দেখে নেওয়া যাক এই দুই মহান বিপ্লবীনীর জীবনকাহিনী-

রাসমণির কথা:

ময়মনসিংহ জেলার উত্তরে গারো পাহাড়ের কোলে বাস হাজং উপজাতির। অর্থনৈতিকভাবে ভয়ঙ্কর পিছিয়ে পড়া এই গোষ্ঠীর জীবনে অভিশাপের মতো ছিল মধ্যযুগীয় ভূমিদাস প্রথা যার পোশাকী নাম টঙ্ক প্রথা। তোলা আদায়, বেগার খাটানো, নানা অর্থনৈতিক কর বসিয়ে সীমাহীনভাবে তাদের শোষণ করত স্থানীয় জমিদার ও মহাজনেরা। ১৯৩৭-৩৮ এর কৃষক বিদ্রোহের ঢেউয়ে প্রবাহিত হয়েছিল বহু হাজং চাষী। সেই শুরু। তারপর ১৯৪৬ সালে তেভাগার প্রাবল্যে উৎসাহিত হাজংয়েরা টঙ্ক প্রথা সহ সমস্ত সামন্ত শোষণের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে আওয়াজ তুলেছিল এবং এই আধা ঘুমন্ত অত্যাচারীত মানুষদের একত্রিত করেছিলেন যে অতি সাধারণ নারী তিনিই রাসমণি। অষ্টাদশ শতকে ভক্তিবাদী আন্দোলনের কারণে আমরা আরেক রাসমণিকে চিনি যিনি বিখ্যাত হয়েছেন ‘লোকমাতা' নামে অথচ ততটাই বিস্মৃতির আড়ালে রয়ে গেছেন হাজং নেত্রী রাসমণি। যার বৈপ্লবিক নেতৃত্ব, সমাজসেবা, আত্মত্যাগ, স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকার কথা।

 রাসমণি সম্ভবত ১৮৯৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। যেহেতু বিবাহের অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বিধবা হন তাই কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজে তাঁকে ডাইনী বলে ডাকা হতো। যদিও এই ‘ডাইনীর’ ডাক পড়ত প্রসবকার্য্যে। তিনি ছিলেন অঞ্চলের শ্রেষ্ঠ দাই বা ধাত্রী। রুগ্ন শিশুদের চিকিৎসার জন্যে বৃদ্ধবৃদ্ধাদের

৩৩