পাতা:সেই সব শহীদেরা - পিনাকী বিশ্বাস (২০২২).pdf/৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কাছ থেকে ভেষজ, গাছগাছড়া, দ্রব্যের গুণাগুণ আয়ত্ত্ব করেন। এ জাতীয় সমাজসেবামূলক কাজ তাঁকে সম্প্রদায়ের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় করে তোলে। ১৩৫০ (বঙ্গাব্দ)-এর মন্বন্তর মহিলা আত্মরক্ষা সমিতির সাথে যুক্ত হয়ে লঙ্গরখানা খুলে অন্ততঃ তিনটি গ্রামের মানুষের মুখে অন্ন জোগান রাসমণি। তাঁর নির্দেশে খাদ্যসংগ্রহকারী দল, চোরাব্যবসায়ী ও মজুতদারের গুদাম দখল করে চাল, বস্ত্র, অর্থ বাজেয়াপ্ত করত। দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধে সমবায় প্রথায় চাষবাস, সাধারণের জন্য ধানের গোলা ও মেয়েদের জন্য কুটীরশিল্প কেন্দ্রস্থাপন করেন এই মহীয়সী নারী। প্রায় ৬৫ বছর আগে রাসমণি তৈরী করেছিলেন নৈশবিদ্যালয়, জনসাধারণকে সঙ্গে নিয়ে রাজনৈতিক পাঠচক্র, সভাসমিতি আয়োজন করা, বাঁধ বাঁধা, খাল খনন ইত্যাদি প্রকল্প বাস্তবায়িত করেন। জমিদারদের অত্যাচার ও কু-প্রভাব থেকে হাজংদের মুক্ত করার অভিপ্রায়ে গণচেতনায় উদ্বুদ্ধ বিপ্লবী দলও গড়ে তোলেন তিনি। মিছিলের পুরোভাগে থাকত নারী বাহিনী। জমিদারেরা প্রমাদ গুণেছিল এই বিশাল জন জাগরণে। কিন্তু তা আটকানোর সাধ্য ছিল না কারোর। প্রৌঢ় বয়সে রাসমণির অফুরন্ত কর্মদক্ষতা, অগ্নিবর্ষী বক্তৃতা, গ্রামে গ্রামে প্রচার জ্বালিয়ে দিল হাজং বিদ্রোহের আগুন। উত্তর ময়মনসিংহের সুসং জমিদারীর তিনটি মহকুমায় অবসান ঘটলো জমিদারী শাসনের। ব্রিটিশ পুলিশরাজের পরোয়া না করে রাসমণির নেতৃত্বে বীর হাজং সন্তান-সন্ততিরা প্রতিষ্ঠা করে ক্ষুদ্রাকার গণরাষ্ট্র। যেখানে শাসকের রক্তচক্ষু নেই, জমিদার নেই, পেয়াদা নেই, তাই শোষণও নেই। ১৯৪৬ সালের ১লা জানুয়ারী জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ব্যাস্টিনের পরিচালনায় E.F.R. ভয়ঙ্কর অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হানা দেয় হাজংদের গ্রামগুলিতে। নির্বিচারে গুলিবর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুঠতরাজ এবং নারীধর্ষণ চলতে থাকে। বর্বর সেনাদল ধ্বংস করে সংগ্রামী চাষীদের গড়ে তোলা ফসল গুদাম, স্কুল, সমিতি (যৌথবাহিনীকে মনে পড়েছে?)। ঐতিহাসিক সুপ্রকাশ রায় লিখেছেন “প্রায় একশত গ্রামব্যাপী এই ভয়ঙ্কর ধ্বংসকাণ্ড ও নরহত্যার মধ্যে হাজং চাষীরা ভয়ে পলায়ন করিল না। অমানুষিক শোষণ ও উৎপীড়নের মধ্যেই যাহারা জীবন কাটায় তাহারা ধ্বংস ও মৃত্যুকে

৩৪