পাতা:সেই সব শহীদেরা - পিনাকী বিশ্বাস (২০২২).pdf/৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

একজন প্রকৃত গেরিলা যোদ্ধার মতোই বহন করতেন রাইফেল। তা তৈরির কাজটিও শিখে নেন একসময়। তাঁর উপস্থিত বুদ্ধি ও সচেতনতা একবার তাঁকে পুলিশের গুলিতে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচায়। পশ্চিম বস্তারের ন্যাশনাল পার্ক অঞ্চলে ১৯৯৭ সাল নাগাদ তীব্র দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। অসহ্য গরম ও শুষ্ক আবহাওয়ায় তিনি প্রথমবার ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন। অসুস্থ শরীরেও তীব্র ইচ্ছাশক্তির বলে ঝাঁপিয়ে পড়েন প্রতিরোধ কার্যে। তখন সেখানে ফসল ফলানো ও সুষম বণ্টনের কাজ চলছিল। শুরুটা করেছিলেন শূন্য থেকে। কঠোর অধ্যাবসায় ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টা তাঁকে জনপ্রিয় করে তুলতো সম্পূর্ণ অচেনা পরিবেশেও। সাধারণ CPI(ML)(PW) কর্মী হিসাবে কাজ শুরু করে পরবর্তীতে হয়ে ওঠেন বিদর্ভ রিজিওন্যাল কমিটি মেম্বার। যখন AILRC প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৮৩ তে, তিনি ছিলেন অন্যতম স্থপতি। বিদ্যার্থী প্রগতি সংগঠন, স্ত্রী চেতনা, অল মহারাষ্ট্র কামগার ইউনিয়ন প্রভৃতি সংগঠন, গড়ার প্রধান স্থপতি ছিলেন তিনি। নারীমুক্তির প্রশ্নে কাজ করে চলা অনুরাধা অসংখ্য তত্ত্বগত ও মতাদর্শগত প্রবন্ধ লিখেছেন সব ধরণের পত্রপত্রিকায়। মার্ক্সীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অস্পৃশ্যতা, নারী স্বাধীনতার ওপর সুচিন্তিত প্রবন্ধের পাশাপাশি আক্রমণ করেছেন বুর্জোয়া নারীবাদ ও উত্তর আধুনিক চিন্তাকে। ইংরেজি, হিন্দি, মারাঠী ভাষায় স্বনামে ও ছদ্মনামে লিখেছেন, পিপলস্ মার্চ, জনসংগ্রাম, কলম ইত্যাদি পত্রিকায়। অনুবাদ করেছেন চেরাবান্দারাজুর কবিতা। ভারতে জাতপাত প্রশ্নে তাঁর তৈরি পলিসি পেপার পূর্বতন CPI(ML)(PW) পার্টি দলিল হিসাবে গৃহীত হয়। ২০০৭ সালের ঐক্য কংগ্রেসে CPI(Maoist)-এর একমাত্র মহিলা মেম্বার হিসাবে যোগদান করেন কেন্দ্রীয় কমিটিতে। সাড়ে তিনদশকের সুদীর্ঘ কার্যকলাপ তাঁকে উন্নীত করেছিল দণ্ডকারণ্য-বিদর্ভের বিপ্লবী নারী আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেত্রী হিসাবে। তাঁর সারা জীবনের লড়াই এটাই প্রমাণ করে যে নারীমুক্তি আন্দোলন আদতে শ্রেণীসংগ্রামেরই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। মধ্যবিত্ত সুলভ বিপ্লবী বাগাড়ম্বর ও কেরিয়ার সর্বস্বতার মুখে লাথি মেরে বেরিয়ে এসেছিলেন অনুরাধা গান্ধী। তাঁর জীবনযাপন, শিশুসুলভ সারল্য এবং

৩৭