প্রাণে বঞ্চলেও মহাপরাক্রান্ত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ আঁতকে উঠেছিল সেদিন। সর্বমোট চারজনের মৃত্যুদণ্ড হয়। অন্যতম অবোধবিহারী ফাঁসির মঞ্চে তাঁর শেষ ইচ্ছে ব্যক্ত করেছিলেন এই বলে- ‘আমি চাই এই আগুন চারিদিকে ছড়িয়ে যাক, এ আগুনে আমি তুমি আমরা সবাই ছয় হবো, তার সাথে পুড়ে নিঃশেষ হয়ে যাবে আমাদের দাসত্ব।’২ এ একেবারে নৈরাজ্যবাদের গোড়ার কথা। ফাদকের গ্রেপ্তারের পর তার বক্তব্যও অনেকটা এইরকম- ‘My life alone will not given but thousands of others will be killed.’
এই যে ধ্বংসের সর্বগ্রাসী ভাবনা যার মধ্যে নিহিত ছিল নৈরাজ্যবাদী ধারণা, তা ভারতীয় মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে জপথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ স্থান অধিকার করে। উল্লেখ্য গদর পার্টির প্রতিষ্ঠাতা লাল হরদয়াল ছিলেন নৈরাজ্যবাদের পৃষ্ঠপোষক। অকল্যান্ডে গিয়ে তিনি ‘বাকুনিন ইনস্টিটিউট অফ ক্যালিফোর্নিয়া’ প্রতিষ্ঠা করেন। হার্ডিঞ্জ কাণ্ডের সময় কমরেড ভগৎ সিং-এর বয়স মাত্র ছয়। তখন তিনি মাঠে কাঠি পুঁতে বন্দুকের চাষ করছেন। বোঝা যায় শিশুমনে এ ঘটনের ভীষণ প্রভাব ফেলেছিল। ১৯১৫ তে ব্যর্থ হয়েছে রাসবিহারী বসুর সেন বিদ্রোহের প্রচেষ্টা, ফাঁসি হয়েছে কর্তার সিং সারাভা (ভগৎ সিং-এর আদর্শ) ও আরো অনেকের। চার বছর পর জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড। এই দুই ঘটনা সবচেয়ে বেশি নাড়া দিয়েছিল তাঁকে। জেনেছেন বিশ্ববিপ্লবের ইতিহাস বাকুনিনের ‘রাষ্ট্র এবং ঈশ্বর’ গ্রন্থটি গভীর মনোযোগের সাথে পথ্য করেছেন। নৈরাজ্যবাদ শুধু নয়, মার্কস, এঙ্গেলস, প্লেখানভ, লেনিন, ট্রটস্কি যতটুকু পেয়েছিলেন অদম্য উৎসাহে শেষ করেছেন। পড়েছেন গোর্কি, ডস্তয়ভস্কি, ভিক্টর হুগো, আপটন সিনক্লেয়ার, ডিকেন্স, শ এবং অবশ্যই রবীন্দ্রনাথ। মাত্র ১৬ বছর বয়সে তাঁর লেখা বিস্ময়কর প্রবন্ধ ‘পাঞ্জাবের ভাষা ও লিপির সমস্যা’তে কবি নজরুলকে বর্ণনা করেছেন বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্ররূপে।৩
আবার ১৯২৮ সালের জুলাই মাসে কীর্তি পত্রিকায় ‘নয়ে নেতাও কো আলগ আলগ বিচার’ নিবন্ধে সুভাষচন্দ্র ও নেহেরুর তুলনা প্রমাণ