করছে কি অসম্ভব দুরদর্শী ছিলেন তিনি। একজন সন্ত্রাসবাদী বিপ্লবী থেকে পরিপূর্ণ মার্কসবাদীতে উত্তরণ কোনো Magical Way-তে হয়নি। স্বল্প জীবনে অসম্ভ অধ্যয়ন আর লড়াকু মানসিকতা তাঁকে উন্নীত করে প্রকৃত কমিউনিস্ট নেতা হিসেবে। সাথী শিব বর্মা লেখছেন ভগৎ সিং ও শুকদেব দুজনেই বাকুনিনের দর্শনে বিশেষ প্রভাবিত ছিলেন, সেই অবস্থান থেকে সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারে ফিরিয়ে আনার কৃতিত্ব মূলত দুজনের; কমরেড সোহন সিং জোশ এবং লাল ছবিল দাশ। কমরেড জোশ ছিলেন ‘কীর্তি’ পত্রিকার সম্পাদক যেখানে ১৯২৮ সালের মে মাস থেকে ভগৎ সিং ধারাবাহিকভাবে প্রবন্ধ লিখতে আরম্ভ করেন। বিষয় ছিল নৈরাজ্যবাদ।৪ প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখা ভালো ওই বছরের ২১-২৪ শে ডিসেম্বর কলকাতায় শ্রমিক-কৃষক দলের (Workers and Peasant Party) সারা ভারত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।৫ সভাপতিত্বে ছিলেন সোহন সিং জোশ। উপস্থিত ছিলেন তাবড় কমিউনিস্ট নেতার, ঘটে, পি. সি. জোশী, মুজফফর আহমেদ, আব্দুর রেজ্জাক খাঁ প্রমুখ। দর্শকদের মধ্যে গোপনে এসেছিলেন ভগৎ সিং স্বয়ং।৬ হিন্দুস্থান সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন (HSRA) ও তার সদস্যদের যারা শুধুই একটি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে দেখতে চান, ভগৎ সিং ও তাঁর সাথীদের বৈপ্লবিক উত্তরণটাকে এড়িয়ে যেতে চান তাঁর। একজন সশস্ত্র সংগ্রামের বিশ্বাসী বিপ্লবীর নৈরাজ্যবাদের প্রতি আকর্ষণ থাকতেই পারে, কমরেড সিংয়েরও ছিল, তবে তা থেকে ওই বয়সে পরিপূর্ণ মানসিক গুণে ঋদ্ধ মার্কসবাদী হয়ে ওঠা তাঁর মতো অনন্যসাধারণ ব্যক্তির পক্ষে অসম্ভব কিছু নয়। সাম্যবাদের অন্তিম আদর্শও রাষ্ট্রের বিলোপ ছয়, কিন্তু নৈরাজ্যবাদীরা মনে করেন রাষ্ট্রের বিলপের মাধ্যমেই জনগণের মুক্তি সম্ভব। এই ধারণার প্রতি সর্দার ভগৎ সিং সহনুভূতিশীল ছিলেন ঠিকই তবে পরবর্তীতে বিশ্বমানবসমাজকে পুঁজিবাদের শৃঙ্খল এবং যুদ্ধের সর্বনাশ সঙ্কট থেকে রোখার জন্য সর্বহারার একনয়কতন্ত্রের ধারণাকেই দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরেন।
অ্যাসেম্বলিতে বোমা বিস্ফোরণের প্রেরণা যার কাছ থেকে পেয়েছিলেন