পাতা:সেই সব শহীদেরা - পিনাকী বিশ্বাস (২০২২).pdf/৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সেই বৈলেয়ন্ট ছিলেন প্রকৃত অর্থেই নৈরাজ্যবাদী। বোঝাই যাচ্ছে চিন্তাচেতন ও মতাদর্শ ভগৎ সিং তাঁর পূর্বসূরীকে ছাপিয়ে গেছিলেন। ‘অ্যানার্কিজম’-এর বদলে শ্লোগান তোলেন ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’। বিপ্লবের প্রশ্নে এবং সন্ত্রাসবাদী হিসেবে তাঁকে, তাঁর সহযোগীদের যে সমালোচনা করা হয় তার প্রত্যেকটির জবাব তিনি নিজেই দিয়েছেন। এ প্রশ্নে বলা দরকার নৈরাজ্যবাদ ও সন্ত্রাসবাদ এক জিনিস তো নয়ই বরং তাদের মধ্যে মুলগত অনেক তফাৎ আছে। প্রায়শই দুটিকে এক অর্থে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এখনও পর্যন্ত সন্ত্রাসবাদের সর্বজনগ্রাহ্য সংজ্ঞা দেওয়া সম্ভব হয়নি। একে নির্দিষ্ট মতবাদের ওপর দাঁড় করানো যাবে না, অন্যদিকে নৈরাজ্যবাদ একটি তত্ত্বের ওপর প্রতিষ্ঠিত যার অর্থনৈতিক ভিত্তি রয়েছে। আধুনিক নৈরাজ্যবাদের প্রবক্তা পিটার ক্রপটক্রিন একে চারভাগে ভাগ করেছেন। প্রথম ধারাটি অরাজনৈতিক, প্রবক্তা মাক্স স্টান্দর নামে এক জার্মান, এখানে রোমান্টিক ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের প্রভাব লক্ষ্যও করা যায়। পরবর্তী ধারা রাজনটিক হলেও সমাজবাদী নয়। প্রবক্তা প্রুঁধো। তাঁর আদর্শ ক্ষুদে উৎপাদকদের দিয়ে গড়া সমাজ। তৃতীয়টি শান্তিবাদী অ্যানার্কিস্ট, যেমন ছিলেন টলস্টয়। গান্ধীকে ও অনেকে একই দৃষ্টিকোণ থেকে নৈরাজ্যবাদী বলে থাকেন। চতুর্থ ধারাটি নিয়েই আমরা আলোচনা করছি যেটাকে ইতিহাসে অ্যানার্কিস্ট কমিউনিজম বলে। রাষ্ট্র এবং অর্থনীতি সম্পর্কে এনদর গুরুত্বপূর্ণ মতামত রয়েছে। ভগৎ সিং অ্যানার্কিস্ট ছিলেন না, সন্ত্রাসবাদী তো ননই। জেল থেকে পাঠান ইস্তেহার, চিঠি এবং রচনাগুলি (দুর্ভাগ্যবশতঃ যার অনেককিছুই পরবর্তী প্রজন্মের হাতে আসেনি, জেলজীবনে তিনি চারখানে বই লেখেন) যতটুকে পাওয়া জগেছে এর পিছনে প্রমাণ পাওয়া যায়।

 ভারতে স্বাধীনতা আন্দোলনে তিনীত ধারা রয়েছে, প্রথমটি সশস্ত্র বলপ্রযোগের মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসনের উচ্ছেদ; অহিংস এবং আপোষ আলোচনার মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর; তৃতীয়টি মার্কসবাদী গণ আন্দোলনের ধারা। কমরেড সিংয়ের সবচেয়ে বড় অবদান তিনি প্রথম ও তৃতীয় এই লাইনের অভূতপূর্ব সংমিশ্রণ ঘটিয়েছিলেন। একদিকে লাল লাজপত

৪৫