পাতা:সেই সব শহীদেরা - পিনাকী বিশ্বাস (২০২২).pdf/৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

এক এক করে সব সাথীদের সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটে যায়, মানুষ তখন দুটো সহানুভুতির কথার জন্যও লালায়িত হয়। তেমনি সময়ে যারা অবিচলিত থেকে নিজেদের পথ ত্যাগ করে না, ইমারতের বোঝায় যাদের পা টলে না, কাঁধ বাঁকে না, তিলতিল করে যারা নিজেদের গলিয়ে যায়, জ্বালিয়ে যায় যাতে প্রদীপের জ্যোতি মলিন না হয়, নিস্তব্দ পথে যাতে আঁধার না ছেয়ে আসে, সেইসব লোকের ত্যাগ আত্মবলিদান কি প্রথমোক্তদের তুলনায় বেশি নয়?”২৬[শহীদ স্মৃতি-শিব বৰ্মা]

 এত অল্পবয়সে যে মানুষটি যে মানুষটি হাসতে হাসতে ফাঁসির দড়িকে আলিঙ্গন করেছিলেন দেশবাসী জানে না তিনি বাস্তবিক কি ছিলেন। কতটা অসামান্য চিন্তাবিদ বুদ্ধিজীবী এবং সদ-হৃদয়সম্পন্ন মানুষ ছিলেন একথা অনেকেরই জানা নেই। পরবর্তী সময়ে দেশের কর্ণধারেরা সেটা জানাবার প্রয়োজন বোধ করেছিলেন কি? মৃত্যুর আগের মুহূর্তে ল্যাটিন আমেরিকার এক বিপ্লবী ঘাতকের চোখে চোখ রেখে বলেছিলেন, “তোমরা হত্যা করতে পারবে শুধু মানুষটিকে”। একই ভাবে ভগৎ সিং বলে গিয়েছিলেন, “একজন ব্যক্তিকে হত্যা করা সহজ কিন্তু আদর্শকে হত্যা করা যায় না।”

 প্রথম জনকে সার্ত্রে আখ্যা দেন ‘তার সময়কার সম্পূর্ণ মানুষ হিসেবে’ দ্বিতীয়জনকে একমাত্র সুভাষচন্দ্র ছাড়া সেরকম সন্মান (He symbolises the spirit of revolt that has taken possession of the country) কেউ দেননি।

 প্রথমোক্ত ব্যক্তির ছবি ইদানিং জামা, টুপি, আর্মব্যান্ড মায় অন্তর্বাসেও শোভা পায়। এদেশে তিনি রূপকথার রাজপুত্র, বিশ্ববিপ্লবের আইকন। অথচ যে ব্যক্তি নিরামিষ একখানি বোমা ফেলে পৃথিবী শাসন করা ব্রিটিশ সিংহের থরহরি কম্পমান করে দিয়েছিলেন, সেই জায়গায় তাঁর একটি ছবি বা মূর্তিও নেই।

৫৪