একদিক দিয়ে ভালোই হয়েছে। মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে রক্তঋণ শোধ হয় না। পাড়ার মোড়ে মোড়ে মূর্তি বানিয়ে, তা আবার সমাজবিরোধীদের দিয়ে উন্মোচন করে কিম্বা বুকে উল্কি এঁকে তারই পূজার ছলে তাঁকে ভুলে থাকার ভণ্ডামিটাও তুলনায় কম। ১৯৩১ সনের ২৩শে মার্চ যে ক্লান্তিহীন বিপ্লবীকে ইংরেজরা কারাবিধি লঙ্ঘন করে ফাঁসিতে লটকে দেয় তখন তার বয়েস মাত্র ২৩ বছর ৫ মাস ২৭ দিন। শহীদের জীবনকালের হিসাব সামান্য পাটিগণিতে বা বলিউডি সিনেমায় পাওয়া যায় না। যতদিন পৃথিবীতে থাকবে অন্যায়, থাকবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদও। তিনি জ্বলবেন পৃথিবীর রঙে।
অনেকে তাঁকে নৈরাজ্যবাদী শিরোপা দেবেন। কারণ ফরাসী অ্যানার্কিস্টের হুবহু অনুকরণে আইনসভায় বোমা ফেলেছিলেন তিনি।
কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য না হওয়াতে ‘গোঁড়া’ বিপ্লবীরা হয়তো কখনোই ভগৎ সিংকে কমিউনিস্ট বলবেন না, তবু তাঁর চিন্তাচেতনা জীবনদর্শন এবং লড়াই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কমিউনিস্ট বীরদের সাথে তাঁকে একাসনে বসাবে। সুতরাং তিনি বেঁচে থাকবেন একজন কমিউনিস্ট হিসাবে। প্রতিকারহীন শক্তের অপরাধে যখন বাকি সব নিয়মতান্ত্রিক প্রচেষ্টা মাথা কুটে মরবে, পৃথিবীর নিপীড়িত জনজাতি যেখানে, যে প্রান্তে শেষ সম্বল হিসেবে তুলে নেবে রাইফেল, কান্না জ্বালাবে সর্বগ্রাসী দাবানল সেখানেই তিনি দেখা দেবেন সন্ত্রাসবাদী রূপে। আবার এই সমস্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরিচয়ের উর্ধ্বে দেশবাসীর কাছে, সাধারণ মানুষের হৃদয়ে তিনি থাকবেন আলাদা এক পরিচয়, তাকে আমরা ভালোবেসে ডাকব একটি বিশেষ নামে। শহীদ-ই-আজম। শহীদ কুলে সম্রাট।
টীকাঃ-
১। সন্তোষকুমার অধিকারী, সন্ত্রাসবাদ ও শহীদ ভগৎ সিং, পৃষ্ঠা ১১
২। সন্তোষকুমার অধিকারী, ঐ পৃষ্ঠা ১৩
৩। বিজয় বন্দ্যোপাধ্যায়, বিপ্লবী ভগৎ সিং পৃষ্ঠা ৪৯
৪। বিনদ মিশ্র, ভগৎ সিং বিপ্লবী যুবসমাজের আলোকবর্তিকা, আজকের দেশব্রতী, ৩১শে