জেনারেল চু-তের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তদানিন্তন জাতীয় কংগ্রেস সভাপতি সুভাষচন্দ্র মেডিক্যাল মিশন পাঠাতে মনস্থির করেন তার মধ্যে স্থান করে নেন ২৪ বছর বয়সী দ্বারকানাথ। ১৯৩৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর কোয়াংচৌতে পৌঁছে তারা বুঝতে পারেন কুয়োমিন্টাং কর্তৃপক্ষ তাদের সাহায্য গ্রহণে আগ্রহী নয়। স্বাধীনভাবে কাজ করার পরিবেশও সেখানে ছিল না। শেষ পর্যন্ত তারা ঠিক করেন চীনের দুর্গম উত্তরাঞ্চলে মিশনকে নিয়ে যাওয়া। ইয়েনানে তখন লড়ছে অষ্টম রুট বাহিনী এবং জাপানি আগ্রাসনের ঝাঁজটাও সেখানে বেশি। যদিও মিশন নেতা ডাঃ অটল ছাড়া বাকিদের যুদ্ধক্ষেত্রে কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিল না কিন্তু সাধারণ সরঞ্জাম এবং সেবা করার ঐকান্তিক আগ্রহকে সম্বল করেই ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইলেন তারা। ইয়েনানে যাওয়ার পূর্ব মুহূর্তে ভারতবর্ষ থেকে এল চরম দুসংবাদ! কোটনিস পিতৃহারা হয়েছেন। সকলের আন্তরিক অনুরোধ সত্ত্বেও দেশে ফিরলেন না তরুন ডাক্তার। কারণ তার কাছে ফিরে যাওয়ার অর্থ মৃত পিতার স্বপ্নকেই অসফল করা যার নিকট থেকে দেশপ্রেম আর সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতার শিক্ষা অর্জন করেছিলেন তরুন পুত্র। মিশন শেষে ফিরে গিয়েছেন সবাই। ফেরেননি একজন। ফেরা সম্ভব ছিল না, কারণ তিনি এতদিনে চীনা জনগণের মুক্তির সংগ্রামকে নিজের দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সঙ্গে একাকার করে ফেলেছেন। এক পরাধীন দেশের নাগরিক কোটনিসের কাছে প্রেরনা হয়ে দাঁড়ালো আরেক পরাধীন জাতির অনমনীয় মুক্তিসংগ্রাম। শিখলেন চীনা ভাষা, বিবাহ করলেন প্রতিরোধ যুদ্ধ অংশগ্রহণকারী তরুণী নার্সিং শিক্ষিকা কুয়োচিন-লানকে ছুটে চললেন এক যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আরেক যুদ্ধক্ষেত্রে। কখনও Bethune International Peace Hospital-এর ডিরেক্টর, কখনও Bethune Hygiene School-এর লেকচারার। এর মাঝে আন্তর্জাতিকতাবাদ, নারীমুক্তির ওপর বক্তব্য রেখেছেন। উৎপাদন অভিযান, শুদ্ধিকরণ, সাংস্কৃতিক কাজে অংশ নিয়েছেন। প্রতিনিয়ত শেখবার চেষ্টা করেছেন জনগণের কাছ থেকে। এভাবেই আসতে আসতে হয়ে উঠলেন অষ্টম রুটবাহিনীর একজন বিশ্বস্ত সৈনিক। ডাঃ বেথুনের বিপ্লবী মানবতাবাদের সার্থক প্রয়োগ ঘটাতে বাজি
পাতা:সেই সব শহীদেরা - পিনাকী বিশ্বাস (২০২২).pdf/৫৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৯