বন্ধুমহলে, সহপাঠীদের অত্যন্ত প্রিয় মুরারি গল্প, প্রবন্ধ, কবিতার মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে চাইলেন শোষিত মানুষের কথা। তাদের প্রতিবাদ প্রতিরোধের কথা, শ্রেণীসংগ্রামের কাহিনী। আড়িয়দহ-দক্ষিণেশ্বর অঞ্চলে ছাত্রযুবকদের মধ্যে অসামান্য দক্ষতায় সংগঠন গড়ে তুলতে থাকেন তিনি। লিটিল ম্যাগাজিনের সম্পাদনা থেকে শুরু করে ফ্রি-কোচিং, ছাত্র-শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন ইত্যাদি সামাজিক-রাজনৈতিক ভেতর দিয়ে জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দিলেন নকশালবাড়ির রাজনীতিকে। চারু মজুমদারের ‘গ্রামে চলো” ও ‘শ্রমিক কৃষকদের সাথে একাত্ম হও' আহ্বানে সাড়া দিয়ে মেদিনীপুরের বিভিন্ন গ্রামে গোপন কাজ করতে থাকেন তিনি। এই অকুতোভয় তরুণ ততদিন হয়ে উঠেছেন পার্টির সর্বক্ষণের কর্মী, একজন নির্ভরযোগ্য সংগঠক। অনুধাবন করেছেন নকশালবাড়ির আলোকে সশস্ত্র সংগ্রামই এক ও একমাত্র মুক্তির পথ। বাংলা বিহার উড়িষ্যার সীমান্ত আঞ্চলিক কমিটির অধীনে ‘আনন্দ' ছদ্মনামে রাজনৈতিক কাজে পুরোপুরি আত্মনিয়োগ করেন এবং বহরগোড়া-চাকুলিয়া কৃষক আন্দোলনেও নেতৃত্ব দেন। ১৯৬৯ সালের অক্টোবর মাসে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে ও হাজারিবাগ সেন্ট্রাল জেলে প্রেরণ করে এবং ১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই জেল পালানোর মিথ্যা গল্প সাজিয়ে তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে কর্তৃপক্ষ। হত্যা করে তাঁর সঙ্গী আরো ষোলোজন বন্দীকেও ৷
স্বাধীনতা সংগ্রামী, বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক অরবিন্দ পোদ্দার মহাশয় তাঁর ‘রক্তে ভাসে স্বদেশ সময়' লেখাটিতে শহীদ মুরারির কবি প্রতিভাকে সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করেছেন। তাঁর ভাষায় ‘ভালোবাসা কবিতাটি পাঠ করতে করতে কাব্যের সৌন্দর্যের মধ্যে সংকল্পের সংহত শক্তির প্রকাশ দেখে বিস্মিত হলাম। ওই কবিতার শেষ অংশটি এই রকম-
চাঁদ, নদী, ফুল, তারা, পাখি
দেখা যাবে কিছুকাল পরে
কেননা এ অন্ধকারে শেষ যুদ্ধ বাকি
এখন আগুন চাই আমাদের এই কুঁড়েঘরে।