পাতা:সেই সব শহীদেরা - পিনাকী বিশ্বাস (২০২২).pdf/৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

জেল ভেঙ্গে বন্দীদের বের করে এনেছেন সাধারণ মানুষ। রেঙ্গুন ছাড়া দেশের প্রায় সবকটি বন্দীশালা চুরমার হয়ে গেছে! গ্রামের কৃষকসভা ও গনমুক্তি কমিটি যৌথভাবে দখলিকৃত অঞ্চলগুলির শাসনভার তুলে নিয়েছিল সেই ক্রান্তিকালে!

 তবে এ জয় ছিল সাময়িক। এরপরের ইতিহাস আশাভঙ্গের। বেদনার এই গৌরবময় মুক্তিসংগ্রাম তথাকথিত সাফল্যের মুখ দেখেনি। শাসকের কূট চক্রান্ত, পাশাপাশি প্রবল দমননীতির সামনে শেষ পর্যন্ত পরাজিত হল বিপ্লবী সরকার। পার্টির কৌশলগত ত্রুটিও কিছুটা দায়ী ছিল এই পরিণতির জন্য।

 ডাঃ নাগ সহ যে পাঁচজন বাঙালী বিপ্লবী বার্মা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে ছিলেন তাঁরা আর কেউই ফিরে আসেননি ভারতবর্ষে। ১৯৬০ সালের মধ্যেই ডাঃ নাগের সব সাথীরা এঁকে এঁকে মৃত্যুবরণ করেছেন বর্মার মাটিতে। হরিনারায়ণ ঘোষালের মৃত্যু রহস্যাবৃত, অনেকেই মনে করেন দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বে খুন হন তিনি। অমর দে মারা যান দুর্ঘটনায়, গোপাল মুন্সি ও সুবোধ মুখার্জি দুজনেই সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন। ফেরেননি অমর নাগও! হাল ছাড়েননি তিনি। একা কুম্ভের মতো লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন অ্যান্ট ফ্যাসিস্ট লিবারেশন ফ্রন্টের এই অদম্য যোদ্ধা। সাথীহারা হয়ে টানা আটটি বছর! শেষ পর্যন্ত ১৯৬৮-এর ৯ই নুভেম্বর বিপ্লবীদের গোপন ঘাঁটি সেনাবাহিনী দ্বারা আক্রান্ত হয়। সশস্ত্র সংগ্রামে অবতীর্ণ হন অমর নাগ এবং যুদ্ধ শেষে বীরের মৃত্যু বরণ করেন।

 তাঁর সংগ্রামী জীবনচর্যা প্রমাণ করে যে হাত মানুষের জীবন বাঁচাতে চিকিৎসা করতে পারে, প্রয়োজনে সেই হাত রাইফেলও তুলে নেয়। একজন সাধারণ ডাক্তার বৃহত্তর মানবসমাজের স্বার্থে জীবন দিয়ে লিখে যান অসামান্য জীবনেতিহাস।

 তোমায় অনেকে জিগ্যেস করতো
 তোমার দেশ কোথায়?
 আর তুমি হেসে জবাব দিতে,

৭৭