চোখের মণি হয়ে উঠলেন তিনি, দৈনন্দিন সংগ্রামে সুখদুঃখের সাথী। ২১ হাজার বিঘা জমি দখল করে ভূমিহীনদের বিলি করলেন! ততদিনে বিষ্ণু চট্টোপাধ্যায় হয়ে উঠেছেন বিষ্ণু ঠাকুর! জেলা জুড়ে প্রচার হয়ে গেল ‘বিষ্ণু ঠাকুরের আইন’ চালু হয়েছে! চাষিদের আর কোনো ভয় নেই। তাঁর অভূতপূর্ব সাংগঠনিক ক্ষমতা, সাহস, কিংবদন্তীর আকারে ছড়িয়ে পড়লো সাধারণ মানুষের ভিতরে। পুলিশের বেষ্টনী ভেদ করে পালানো, কুমীর কামঠ ভর্তি ভদ্রা নদী পার হয়ে যাওয়া, দুর্ধর্ষ লাঠিয়াল ও জোতদারদের ভাড়াটে বাহিনীর সামনাসামনি মোকাবিলা ইত্যাদি ঘটনায় সরলপ্রাণ কৃষকের ধারণা হল বিষ্টু ঠাকুর জাদু জানুন! তাকে ধরবার সাধ্য পুলিশের নেই, গুলি তাঁর গায়ে লাগে না, ইচ্ছে করলে হাওয়ায় মিশে যান, তিনি অমর, অক্ষয়, অব্যয়! যে বাঁধের ওপর দিয়ে এই মানুষটি হেঁটে যান তা ভাঙ্গে সাধ্য কার? অপরিসীম ভালোবাসা, বিশ্বাস আর জনগণের সাথে মিশে যাওয়ার ক্ষমতা থাকলে তবেই এই উচ্চতায় পৌছানো যায়! বিষ্ণু ঠাকুরের সে গুণাবলী ছিল যা একজন কমিউনিস্ট বিপ্লবীর প্রধান সম্পদ।
তেভাগার অন্যতম নেতা কৃষ্ণবিনোদ রায়ের ভাষায় “কর্মবীর বিষ্টু চট্টোপাধ্যায় কৃষকদের যেই ঐক্য গড়ে তুলেছিলেন সংঘাতের পর সংঘাতে তা দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হল, ক্ষুদ্র এলাকায় যা ব্যপ্ত ছিল তা প্রসারিত হল আরো বড়ো আয়তন জুড়ে......লড়াইয়ের মধ্যে দিয়েই কৃষকদের একতাবদ্ধ সংগ্রাম তাঁর নেতৃত্বে গোটা ডুমুরিয়া, সাহস ও বতেঘাটায় ছড়িয়ে পড়লো। বিষ্টুদার ডাক আসতে থাকলো প্রতি থানা, প্রতি এলাকা থেকে। সেদিন বিষ্টু চট্টোপাধ্যায়কে যাদুকর মনে হয়েছিল।”
১৯৩১ ও ১৯৪৪ সালে দুটি জেলা কৃষক সম্মেলন সফল করার প্রধান কারিগর ছিলেন তিনি তারই উদ্যগে মৌভাগ এলাকায় প্রাদেশিক কৃষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৬-এ বহুবার বন্দী হয়েছেন, বিনা বিচারে জেল হয়েছে, নিগৃহীত হয়েছেন। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে সামন্ততান্ত্রিক শাসন ও অত্যাচারকে প্রায় মুছে ফেলেছিলেন এই অসমসাহসী যোদ্ধা! অভিজাত