পাতা:সেই সব শহীদেরা - পিনাকী বিশ্বাস (২০২২).pdf/৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আজি হতে শতবর্ষ আগে......

“উপনিবেশে বেশ কয়েকটি বিদ্রোহের চেষ্টা ঘটেছে যেগুলি উৎপীড়ক দেশগুলি স্বভাবতই যথাসাধ্য গোপন রাখার চেষ্টা করেছে সামরিক সেন্সর ব্যবস্থার সাহায্যে। তবুও এটা জানা গেছে যে সিঙ্গাপুরে ব্রিটিশরা নৃশংসভাবে দমন করেছে ভারতীয় সিপাহীদের একটি বিদ্রোহ”।লিখছেন লেনিন, সূদূর সুইজারল্যান্ডে বসে, বিদ্রোহের পরের বছর। অর্থাৎ ১৯১৬ সালের জুলাই মাসে।

 সামরিক আদালতের বিচারে মোট ১৩৬ জনের মধ্যে ৩৭ জনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। বাকিদের বেশীরভাগই যাবজ্জীবন দ্বীপান্তরে। কিরকম ছিলো এই বিদ্রোহের দমনের চিত্র? বর্ণনা করেছেন এক প্রবাসী বাঙালী পূর্ণচন্দ্র চক্রবর্তী তাঁর ‘সে যুগের আগ্নেয়পথ' বইতে। “একপার্শ্বে উচ্চপদস্থ অফিসারগণ দাঁড়াইয়ে অপেক্ষা করিতেছেন। ইহার পরেই অপরাধীগণ আসিল। শুনিলাম ইহারা সকলেই এন-সি-ও এবং ভি-সি-ও অর্থাৎ সুবেদার মেজর, সুবেদার এবং হাবিলদার শ্রেণীর। দুই পার্শ্বে দুইজন করিয়া সৈন্য। প্রত্যেককে এক একটি খুঁটির সমমুখে দাঁড় করানো হইলো। প্রায় মধ্যস্থানে দেখিলাম বিশালাকায়, গৌরবর্ণ একটি পুরুষসিংহ (বিদ্রোহীদের নেতা সুবেদার মেজর ডাণ্ডি খান)......। গোরা সৈন্যগণ অপরাধীদের দিকে বন্দুক তাক করিল। অপরাধীগণও সোজা হইয়া দাঁড়াইলো। হুকুম পাঠ আরম্ভ হইলো। মালয়, উর্দু ও ইংরেজী ভাষায়। প্রত্যেক ভাষায় পাঠের পর ইংরেজীতে 'দাস জাস্টিস ইস ডান' বলা হইলো। হুকুম পাঠ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই হুকুম হইলো... ‘ফায়ার’। ১০টি রাইফেল একসঙ্গে গর্জিয়া উঠিল। সকলেই পড়িয়া গেল। কেবল ডাণ্ডি খান চক্ষুদুটি বিস্ফারিত করিয়া টলিতে থাকিলেন, যেন কিছুতেই পড়িতে চাহিতেছেন না। আবার হুকুম হইলো ‘ফায়ার' এবারেও দুইবার গুলি চলিল, ডাণ্ডি খান অবশ্য প্রথম গুলিতেই পড়িয়া গেলেন। এই ডাণ্ডি খান ও তো আমারই মতো স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন দেখিয়াছিলেন। তাঁহার ও তাঁহার

৯২