পাতা:সেই সব শহীদেরা - পিনাকী বিশ্বাস (২০২২).pdf/৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সহকর্মীদের জীবনদান বৃথা যায় নাই। কেবল ভারতে কেহ জানিল না তাঁদের মহান ত্যাগের কথা”।

 সেনাবিদ্রোহের অপরাধে অপরাধী (!) - দের ‘ন্যায়দণ্ড' প্রদানের খণ্ডিত চিত্র মাত্র। শতবর্ষ পার হয়ে গেল নীরবে। চূড়ান্ত অবহেলায়, অসম্মানে। হিন্দু-জার্মান কন্সপিরেসি নামে আখ্যা দিয়েছিলো সাহেবরা। যা ছিল ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে চলা, সবচেয়ে ব্যয়বহুল মামলা। সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সর্বভারতীয় প্রতিরোধ ও বিদ্রোহের ধারাবাহিক পরিকল্পনা, যার বীজ বুনে দিয়েছিলেন ‘কোমাগাতামারু’ জাহাজের স্বাধীনচেতা শিখ যাত্রীরা। প্রায় ৪০০ ভারতীয় যাত্রী নিয়ে কোমাগাতামারু বাবা গুরুজিৎ সিং-এর নেতৃত্ত্বে ভ্যাঙ্কভারে পৌঁছায় ১৯১৪ সালের ২৩ মে। কানাডা সরকার জাহাজের যাত্রীদের (যাদের অধিকাংশই শিখ) বন্দরে নামতে দিতে অস্বীকার করে। কানাডার প্রবাসী ভারতীয়দের অনুরোধ এবং খাদ্য, পানীয় ফুরিয়ে আসা কোমাগাতামারুর যাত্রীদের অসহায়তাকে অস্বীকার করা কানাডা সরকারের বিরুদ্ধে যাত্রীদের ক্ষোভ ক্রমশ বিদ্রোহের আকার নিতে থাকলে বন্দর কর্তৃপক্ষ বিরাট পুলিশ বাহিনী পাঠায়। জাহাজের যাত্রীদের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধে কানাডা পুলিশ প্রাথমিকভাবে পলায়ন করলেও যুদ্ধ-জাহাজের আক্রমণের হুমকিতে ‘কোমাগাতামারু’ শেষ অবধি বন্দর পরিত্যাগ করে। গদর বিপ্লবীরা এই সুযোগ কাজে লাগান । তাঁদের প্রচার, মতাদর্শ, ব্রিটিশ বিরোধিতা স্বভাবতই প্রভাবিত করেছিলো শিখ যাত্রীদের।

 শেষপর্যন্ত হংকং হয়ে জাহাজটি ২৭ সেপ্টেম্বর বজবজে এসে পৌঁছয় ইংরেজ সরকারের পুলিশ জোরপূর্বক আরোহীদের পাঞ্জাবে পাঠাবার ব্যবস্থা করলে সশস্ত্র শিখদের সাথে তুমুল খণ্ডযুদ্ধ হয়। সেনাবাহিনীর এবং আরোহীদের মধ্যে নিহত হন ১৮ জন। বহুলোককে বন্দী করা হয়। এই ছিল সূত্রপাত। ‘গদর’ আদর্শে অনুপ্রাণিত শিখদের ওপর পুলিশি হামলার সংবাদ দাবাগ্নির মতো ছড়িয়ে পড়লো গোটা ভারতে। ইতস্তত জ্বলে উঠলো

৯৩