পাতা:সে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৭

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

রাজত্বটা তার কটাক্ষে খেত দোলা —সর্বদা ধাক্কা লাগতি কখনো পিঠে কখনো বুকে।

 মাষ্টার বললে, তাহোলে কর্তা রিটর্ণ টিকিট না কিনেই দৌড় মারত ডেরা-গাজিখাঁয়ে, গিন্নিত্ব অন্তর্ধান করত ইষ্টার্‌ন্‌ বেঙ্গল রেলের রাস্তা বেয়ে বাপের বাড়িতে।

 মাষ্টার মাঝে মাঝে হাসির কথা বলে কিন্তু হাসে না।

 পুপুদিদি বললে, আমাদের মাষ্টারমশায়কে নিয়ে যদি গল্পের পালা বাঁধতে হয় কী রকম ক’রে বাঁধো।

 তাহোলে দশলক্ষ বছর বাদ দিই।

 তার মানে আজগুবি গল্প বানাতে। অথচ আজকের দিনের বিরুদ্ধপক্ষের সাক্ষীর শঙ্কা থাকত না।

 কোনো সাহিত্যওয়ালা কখনো সাক্ষীর ভয় করে না। আসল কথা আমার গল্পটা ফুটে উঠতে যুগান্তরের দরকার করবে। কেন, সেইটে বুঝিয়ে বলি।

 পৃথিবী-সৃষ্টির গোড়াকার মালমসলা ছিল পাথর লোহা প্রভৃতি মোটা মোটা ভারি ভারি জিনিষ। তারই ঢালাই পেটাই চলেছিল অনেককাল। কঠোরের বেআব্রুতা ছিল বহুযুগ ধ’রে। অবশেষে নরমমাটি পৃথিবীকে শ্যামল আস্তরণে ঢাকা দিয়ে সৃষ্টিকর্তার যেন লজ্জা রক্ষা করলে। তখন জীবজন্তু আসরে নামল স্তুপাকার হাড় মাংসের বোঝাই নিয়ে; মোটা মোটা বর্ম্ম প’রে তারা দুশো পাঁচশো মোণ অসভ্য ল্যাজ টেনে টেনে বেড়াতে লাগল। তারা ছিল দর্শনধারী জীব। কিন্তু সেই মাংসবাহীর দল সৃষ্টিকর্ত্তার পছন্দসই হোলো না। আবার চলল বহু যুগ ধরে নিষ্ঠুর পরীক্ষা। শেষকালে এল মনোবাহী মানুষ। ল্যাজের বাহুল্য গেল ঘুচে, হাড়মাংস হোলো পরিমিত, কড়া চামড়াটা নরম হয়ে এল ত্বকে। না রইল শিং, না রইল ক্ষুর, না রইল

১৩৩