পাতা:সে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 আর তোমার ব্যাখ্যা করতে হবে না। কী বলছিলে বলো।

 আমি তোমাদের বলছিলুম, সত্যযুগে মানুষ বই প’ড়ে শিখত না, খবর শুনে জান্ত না, তাদের জানা ছিল হয়ে-উঠে জানা।

 কী মানে হোলো বুঝতে পারছি নে।

 একটু মন দিয়ে শোনো বলি। বোধ হয় তোমার বিশ্বাস তুমি আমাকে জানো।

 দৃঢ় বিশ্বাস।

 জানো কিন্তু সে জানায় সাড়ে পনেরো আনাই বাদ পড়ে গেছে। ইচ্ছে করলেই তুমি যদি ভিতরে ভিতরে আমি হয়ে যেতে পারতে তাহোলেই তোমার জানাটা সম্পূর্ণ সত্য হোত।

 তাহোলে তুমি বলতে চাও আমরা কিছুই জানিনে।

 জানিইনে তো। সবাই মিলে ধরে নিয়েছি যে জানি, সেই আপোষে ধরে নেওয়ার উপরেই আমাদের কারবার।

 কারবার তো ভালোই চলছে।

 চলছে, কিন্তু এ সত্যযুগের চলা নয়। সেই কথাই তোমাদের বলছিলুম, সত্যযুগে মানুষ দেখার জানা জান্ত না, ছোঁওয়ার জানা জাত না, জান্ত একেবারে হওয়ার জানা।

 মেয়েদের মন প্রত্যক্ষকে আঁকড়ে থাকে, ভেবেছিলেম আমার কথাটা অত্যন্ত অবাস্তব ঠেকবে পুপুর কাছে—ভালোই লাগবে না। দেখলুম একটু ঔৎসুক্য হয়েছে। বললে, বেশ মজা। একটু উত্তেজিত হয়ে উঠেই বললে, আচ্ছা দাদামশায়, আজকাল তো সায়ান্সে অনেক বুজরুগী করছে, মরা মানুষের গান শোনাচ্চে, দূরের মানুষের চেহারা দেখাচ্ছে, আবার শুনছি শিষেকে সোনা করছে, তেমনি একদিন হয়তো এমন একটা বিদ্যুতের খেলা খেলাবে যে ইচ্ছে করলে একজন আর একজনের মধ্যে মিলে যেতে পারবে।

১৩৮