পাতা:সে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৯

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

মহাদেশ, গাছপালা-গুলোর চেহারা ছিল বিশ্বকর্ত্তার প্রথম তুলির টানের। সেইদিনকার আদিম অরণ্যে সেইদিনকার অনিশ্চিত শীতগ্রীষ্মের অধিকারে এই সব ভীমকায় জন্তুগুলোর জীবযাত্রা চলছে কী রকম ক’রে, তা স্পষ্টরূপে কল্পনা করতে পারছে না আজকের দিনের মানুষ এই কথাটা তোমার শোনা ছিল আমার মুখে। পুথিবীতে প্রাণের প্রথম অভিযানের সেই মহাকাব্য যুগটাকে স্পষ্ট ক’রে জানবার ব্যাকুলতা তুমি আমার কথা থেকে বুঝতে পেরেছিলে। তাই আমি যদি হঠাৎ ব’লে উঠতুম, সে কালের রোঁয়াওয়ালা চার দাঁতওয়ালা হাতি হওয়া আমার ইচ্ছে, তাহোলে তুমি খুসি হোতে। তোমার কাবুলিবেড়াল হওয়ার থেকে এই ইচ্ছে বেশি দূরে পড়ত না, আমাকে তোমার দলে পেতে। হয়তো আমার মুখে ঐ ইচ্ছেটাই ব্যক্ত হোত। কিন্তু সুকুমারের কথাটা আমার মনকে টেনে নিয়েছিল অন্যদিকে।

 পুপে ব’লে উঠল, জানি, জানি, সুকুমারদার সঙ্গেই তোমার মনের মিল ছিল বেশি।

 আমি বললুম, তার একমাত্র কারণ, ও ছিল ছেলে, আমিও ছেলে হয়েই জন্মেছিলুম একদিন। ওর ভাবনার ছাঁচ ছিল আমারই শিশু ভাবনার ছাঁচে। তুমি সেদিন তোমার খেলার হাঁড়িকুঁড়ি নিয়ে ভাব গৃহস্থালির যে স্বপ্নলোক বানিয়ে তুলে খুসি হোতে সেটা দেখতে পেতুম একটু তফাৎ থেকে। তুমি তোমার খেলার খোকাকে কোলে ক’রে যখন নাচাতে তার স্নেহের রসটা ষোলো আনা পাবার সাধ্য আমার ছিল না।

 পুপু বললে,আচ্ছা সে কথা থাক্, সেদিন তুমি কী হোতে ইচ্ছে করেছিলে বলো।

 আমি হোতে চেয়েছিলুম একখানা দৃশ্য় অনেকখানি জায়গা জুড়ে। সকালবেলার প্রথম প্রহর, মাঘের শেষে হাওয়া হয়েছে উতলা, পুরোনো অশথ গাছটা চঞ্চল হয়ে উঠেছে ছেলেমানুষের মতো, নদীর জলে উঠেছে কলরব,

১৪৩