পাতা:সে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৫

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 সভ্যরা দুই চক্ষু বুজে বল্‌লেন, শিবুরাম আর নয়। সভা বন্ধ হোলো।

 শিবু বল্‌লে, এখন আমার কাজ হবে শেয়াল সমাজকে অবাক করা।

 এদিকে শিবুরামের পিসি খেঁকিনী কেঁদে কেঁদে মরে। গাঁয়ের মোড়ল হুকুইকে গিয়ে বল্‌লে, মোড়ল মশায়, আজ এক বছরের উপর হয়ে গেল আমার হৌ-হৌকে দেখিনে কেন। বাঘ-ভালুকের হাতে পড়ল না তো?

 মোড়ল বললে, বাঘ ভালুককে ভয় কিসের? ভয় ঐ মানুষ জানোয়ারটাকে, হয়তো তাদের ফাঁদে পড়েছে।

 খোঁজ পড়ে গেল। ঘুরতে ঘুরতে ভলণ্টিয়ারের দল এল সেই চণ্ডীমণ্ডপের বাঁশবনে। ডাক দিলে ছক্কা হুয়া।

 শিবুরামের বুকের মধ্যে ধড়ফড় করে উঠল—একবার গলা ছেড়ে ঐ একতান মন্ত্রে যোগ দিতে ইচ্ছা হোলো। বহুকষ্টে চেপে গেল।

 দ্বিতীয় প্রহরে বাশবনে আবার ডাক উঠ্‌ল—হুক্কা হুয়া। এবার শিবুরামের চাপা গলায় কান্নার মতো একটুখানি রব উঠল। তবু থেমে গেল।

 তৃতীয় প্রহরে ওরা আবার যখন ডাক ছাড়লে শিবুরাম আর থাকতে পারলে না, ডেকে উঠল—হুক্কা হুয়া, হুক্কা হুয়া, হুক্কা হুয়া।

 হুকুই বল্‌লে, ঐ তো হৌ-হৌ-এর গলা শুনি। একবার হাঁক দাও তো।

 ডাক পড়ল—হৌ-হৌ।

 সভাপতি বিছানা ছেড়ে এসে বল্‌লেন, শিবুরাম।

 বাইরে থেকে আবার ডাক পড়ল, হৌ-হৌ! গোঁসাইজি আবার সতর্ক করে দিলেন, শিবুরাম।

 তৃতীয়বার ডাকে শিবুরাম ছুটে বেরিয়ে আসতেই শেয়ালরা দিল দৌড়। হুক্কুই, হৈয়ো, হূ হূ প্রভূতি বড়ো বড়ো শেয়াল-বীর আপন আপন গর্ত্তের ভিতর গিয়ে ঢুক্‌ল।

১৯