উধো। তা হোক্ নেপু। ঐ গামছা নিয়েই তার দিব্যি চলে যাচ্চে—দেখিস্নি রথতলার কাছে অত বড়ে আটচালা বানিয়েছে। গামছা হোক, বাবার গামছা তো।
পঞ্চু। কী ক’রে হোলো? ভেল্কি নাকি?
উধো। হোঁদলপাড়ার মেলায় ভেকু সেদিন বাবার গামছা পেতে বসল। হাজারে হাজারে লোক এসে জুটল। বাবার নামে টাকাটা শিকেটা আলুটা মুলোটা চারদিক থেকে গামছার উপর পড়তে লাগল। মেয়েরা কেউ বা এসে বলে, ও ভেকুদাদা, আমার ছেলেটার মাথায় বাবার গামছা একটু ঠেকিয়ে দে, আজ তিনমাস ধ’রে জ্বরে ভুগছে। ওর নিয়ম হচ্চে নৈবিদ্যি চাই পাঁচশিকে, পাঁচটা সুপুরি, পাঁচ কুন্কে চাল, পাঁচ ছটাক ঘি।
পঞ্চু। নৈবিদ্যি তো দিচ্চে, ফল পাচ্চে কিছু?
উধো। পাচ্চে বৈ কি? গাজন পাল গামছা ভ’রে পনেরো দিন ধ’রে ধান ঢেলেছে, তার পরে ঐ গামছার কোণে দড়ি লাগিয়ে একটা পাঁঠাও দিলে বেঁধে, ঐ পাঠার ডাকে চারদিক থেকে লোক এসে জমল। কী বলব ভাই, মাস এগারে পরেই গাজনের চাক্রি জুটে গেল। আমাদের রাজবাড়ির কোতোয়ালের সিদ্ধি ঘোঁটে, তার দাড়ি চুমরিয়ে দেয়।
পঞ্চু। সত্যি বলছিস্?
উধো। সত্যি না তো কী? গাজন যে আমার মামাতো ভাইয়ের ভায়রা ভাই হয়।
পঞ্চু। আচ্ছা ভাই উধো, গামছাটা তুই দেখেছিস?
উধো। দেখেছি বৈ কি। হটুগঞ্জের তাঁতে দেড়গজ ওসাড়ের যে গামছা বুনুনি হয়, চাঁপার বরণ জমি, লাল পাড়, এক্কেবারে বেমালুম তাই!
পঞ্চু বলিস্ কী? তা সে গাছের উপর থেকে পড়ল কী ক’রে?
উধো। ঐ তো মজা। বাবার দয়া!