অনিমেষ জেগে থাকে নিদ্রাতন্দ্রাহত
শূন্যশয্যা মৃতপুত্র জননীর মত!
নুতন দেশের নাম যত পাঠ করি,
বিচিত্র বর্ণনা শুনি, চিত্ত অগ্রসরি’
সমস্ত স্পর্শিতে চাহে; সমুদ্রের তটে
ছোট ছোট নীলবর্ণ পর্ব্বতসঙ্কটে
একখানি গ্রাম, তীরে শুকাইছে জাল,
জলে ভাসিতেছে তরী, উড়িতেছে পাল,
জেলে ধরিতেছে মাছ, গিরিমধ্যপথে
সঙ্কীর্ণ নদীটি চলি আসে, কোন মতে
আঁকিয়া বাঁকিয়া; ইচ্ছা করে সে নিভৃত
গিরিক্রোড়ে সুখাসীন উর্ম্মিমুখরিত
লোকনীড়খানি, হৃদয়ে বেষ্টিয়া ধরি
বাহুপাশে। ইচ্ছা করে, আপনার করি
যেখানে যা-কিছু আছে; নদীস্রোতোনীরে
আপনারে গলাইয়া দুই তীরে তীরে
নব নব লোকালয়ে করে যাই দান
পিপাসার জল, গেয়ে যাই কলগান
দিবসে নিশীথে; পৃথিবীর মাঝখানে
উদয়-সমুদ্র হতে অস্ত-সিন্ধুপানে
প্রসারিয়া আপনারে তুঙ্গগিরিরাজি
আপনার সুদুর্গম রহস্যে, বিরাজি;
কঠিন পাষাণ ক্রোড়ে তীব্র হিম বায়ে
মানুষ করিয়া-তুলি লুকায়ে লুকায়ে
পাতা:সোনার তরী-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/১৮৯
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৮২
সােনার তরী।