পাতা:সোনার তরী-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/১৯৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৮৬
সােনার তরী।

কোন দিন আনমনে বসিয়া একাকী
পদ্মাতীরে, সম্মুখে মেলিয়া মুগ্ধ আঁখি
সর্ব্ব অঙ্গে সর্ব্ব মনে অনুভব করি
তোমার মৃত্তিকা মাঝে কেমনে শিহরি’
উঠিতেছে তৃণাঙ্কুর; তোমার অন্তরে
কি জীবন-রসধারা অহর্নিশি ধরে’
করিতেছে সঞ্চরণ; কুসুমমুকুল
কি অন্ধ আনন্দভরে ফুটিয়া আকুল
সুন্দর বৃন্তের মুখে; নব রৌদ্রালোকে
তরুলতাতৃণগুল্ম কি গূঢ় পুলকে
কি মূঢ় প্রমোদ-রসে উঠে’ হরষিয়া—
মাতৃস্তনপানশান্ত পরিতৃপ্ত হিয়া
সুখস্বপ্নহাস্যমুখ শিশুর মতন!
তাই আজি কোন দিন,—শরৎ-কিরণ
পড়ে যবে পক্কশীর্ষ স্বর্ণক্ষেত্র পরে,
নারিকেলদলগুলি কাঁপে বায়ুভরে
আলোকে ঝিকিয়া, জাগে মহা ব্যাকুলতা,
মনে পড়ে বুঝি সেই দিবসের কথা
মন যবে ছিল মোর সর্ব্বব্যাপী হয়ে
জলে স্থলে, অরণ্যের পল্লব নিলয়ে,
আকাশের নীলিমায়! ডাকে যেন মোরে
অব্যক্ত আহ্বান রবে শতবার করে’
সমস্ত ভুবন; সে বিচিত্র সে বৃহৎ
খেলাঘর হতে, মিশ্রিত মর্ম্মরবৎ