পাতা:সোনার তরী-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৩৯

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৩২
সোনার তরী।

আষাঢ় হতেছে শেষ, মিশায়ে মল্লার দেশ
রচি “ভরা বাদরের” সুর।
খুলিয়া প্রথম পাতা, গীত গোবিন্দের গাথা
গাহি “মেঘে অম্বব মেদুর।”
স্তব্ধ রাত্রি দ্বিপ্রহরে ঝুপ ঝুপ্‌ বৃষ্টি পড়ে—
শুয়ে শুয়ে সুখ-অনিদ্রায়
“রজনী সাঙন ঘন ঘন দেয়া-গরজন”
সেই গান মনে পড়ে’ যায়।
“পালঙ্কে শয়ান রঙ্গে বিগলিত চীর অঙ্গে”
মন সুখে নিদ্রায় মগন,—
সেই ছবি জাগে মনে পুবাতন বৃন্দাবনে
রাধিকার নির্জ্জন স্বপন।
মৃদু মৃদু বহে শ্বাস, অধরে লাগিছে হাস
কেঁপে উঠে মুদিত পলক,—
বাহুতে মাথাটি থুয়ে, একাকিনী আছে শুয়ে,
গৃহ কোণে ম্লান দীপালোক;
গিরিশিরে মেঘ ডাকে, বৃষ্টি ঝরে তরু শাথে,
দাদুরী ডাকিছে সারারাতি,—
হেন কালে কি না ঘটে! এ সময়ে আসে বটে
একা ঘরে স্বপনের সাথী।
মবি মরি স্বপ্ন শেষে পুলকিত রসাবেশে
যখন সে জাগিল একাকী,
দেখিল বিজন ঘরে দীপ নিবু নিবু কবে
প্রহরী প্রহর গেল হাঁকি;—