পাতা:সোনার তরী-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৫১

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৪৪
সােনার তরী।

আকাশ রয়েছে চাহি, নয়নে নিমেষ নাহি,
হুহু করে’ সমীরণ ছুটেছে অবাধ।
সুর্য্য ওঠে প্রাতঃকালে পূর্ব্ব গগনের ভালে
সন্ধ্যাবেলা ধীরে ধীরে উঠে আসে চাঁদ।
জলরাশি অবিরল করিতেছে কলকল
অতল রহস্য যেন চাহে বলিবারে;—
কাম্যধন আছে কোথা জানে যেন সব কথা,
সে ভাষা যে বোঝে সেই খুঁজে নিতে পারে।
কিছুতে ভ্রূক্ষেপ নাহি, মহাগাথা গান গাহি’
সমুদ্র আপনি শুনে আপনার স্বর।
কেহ যায়, কেহ আসে, কেহ কাঁদে, কেহ হাসে,
ক্ষ্যাপা তীরে খুঁজে’ ফিরে পরশ-পাথর!

একদিন, বহুপূর্ব্বে, আছে ইতিহাস—
নিকষে সোনার রেখা সবে যেন দিল দেখা—
আকাশে প্রথম সৃষ্টি পাইল প্রকাশ;
মিলি’ যত সুরাসুর কৌতূহলে ভরপুর
এসেছিল পা টিপিয়া এই সিন্ধুতীরে,
অতলের পানে চাহি নয়নে নিমেষ নাহি
নীরবে দাঁড়ায়ে ছিল স্থির নতশিরে;
বহুকাল স্তব্ধ থাকি’ শুনেছিল মুদে’ আঁখি
এই মহাসমুদ্রের গতি চিরন্তন;
তার পরে কৌতুহলে ঝাঁপায়ে অগাধ জলে
করেছিল এ অনন্ত রহস্য মন্থন।