পাতা:সোনার তরী-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৫৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৪৬
সােনার তরী।

সোনার শিকল তুমি কোথা হতে পেলে?”
সন্ন্যাসী চমকি ওঠে, শিকল সোনার বটে,
লোহা সে হয়েছে সোনা জানে না কখন।
একি কাণ্ড চমৎকার, তুলে দেখে বারবার,
আঁখি কচালিয়া দেখে, এ নহে স্বপন!
কপালে হানিয়া কর ব’সে পড়ে ভূমিপর,
নিজেরে করিতে চাহে নির্দ্দয় লাঞ্ছনা,—
পাগলের মত চায়— কোথা গেল, হায় হায়,
ধরা দিয়ে পলাইল সফল বাঞ্ছনা!
কেবল অভ্যাসমত নুড়ি কুড়াইত কত
ঠন্‌ করে’ ঠেকাইত শিকলের পর,
চেয়ে দেখিত না, নুড়ি দূরে ফেলে’ দিত ছুঁড়ি’
কখন্ ফেলেছে ছুঁড়ে’ পরশ-পাথর!

তখন যেতেছে অস্তে মলিন তপন।
আকাশ সোণার বর্ণ, সমুদ্র গলিত স্বর্ণ,
পশ্চিম দিগ্বধূ দেখে সোনার স্বপন!
সন্ন্যাসী আবার ধীরে পূর্ব্বপথে যায় ফিরে
খুঁজিতে নুতন করে’ হারানো রতন।
সে শকতি নাহি আর নুয়ে পড়ে দেহভার
অন্তর লুটায় ছিন্ন তরুর মতন।
পুরাতন দীর্ঘপথ পড়ে’ আছে মৃতবৎ
হেথা হতে কতদূর নাহি তার শেষ!