সমুদ্রের প্রতি।
(পুরীতে সমুদ্র দেখিয়া।)
হে আদিজননী, সিন্ধু, বসুন্ধরা সন্তান তোমার,
একমাত্র কন্যা তব কোলে। তাই তন্দ্রা নাহি আর
চক্ষে তব, তাই বক্ষ জুড়ি’ সদা শঙ্কা, সদা আশা,
সদা আন্দোলন; তাই উঠে বেদমন্ত্রসম ভাষা
নিরন্তর প্রশান্ত অম্বরে, মহেন্দ্রমন্দিরপানে
অন্তরের অনন্ত প্রার্থনা, নিয়ত মঙ্গল গানে
ধ্বনিত করিয়া দিশি দিশি; তাই ঘুমন্ত পৃথ্বীরে
অসংখ্য চুম্বন কর আলিঙ্গনে সর্ব্ব অঙ্গ ঘিরে’
তরঙ্গবন্ধনে বাঁধি, নীলাম্বর অঞ্চলে তোমার
সযত্নে বেষ্টিয়া ধরি’ সন্তর্পণে দেহখানি তার
সুকোমল সুকৌশলে। এ কী সুগম্ভীর স্নেহখেলা
অম্বুনিধি, ছল করি’ দেখাইয়া মিথ্যা অবহেলা
ধীরি ধীরি পা টিপিয়া পিছু হটি’ চলি’ যাও দূরে,
যেন ছেড়ে যেতে চাও—আবার আনন্দপূর্ণ সুরে
উল্লসি’ ফিরিয়া আসি’ কল্লোলে ঝাঁপায়ে পড় বুকে
রাশি রাশি শুভ্রহাস্যে, অশ্রুজলে, স্নেহগর্ব্বসুখে
আর্দ্র করি’ দিয়ে যাও ধরিত্রীর নির্ম্মল ললাট
আশীর্ব্বাদে। নিত্য বিগলিত তব অন্তর বিরাট,
আদি অন্ত স্নেহরাশি,— আদি অন্ত তাহার কোথারে!
কোথা তার তল! কোথা কূল! বলো কে বুঝিতে পারে