পাতা:সোনার তরী-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৯৭

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৯০
সােনার তরী।

কাঁদিব দুজনে; যদি ললিত কপোল
মৃদু হাসি ভাসি উঠে, বসি’ মোর কোলে,
বক্ষ বাঁধি বাহুপাশে, স্কন্ধে মুখ রাখি
হাসিয়ো নীরবে অর্দ্ধ-নিমীলিত আঁখি;
যদি কথা পড়ে মনে তবে কলম্বরে
বলে যেয়ো কথা, তরল আনন্দ ভরে
নিঝরের মত, অর্দ্ধেক রজনী ধরি’
কত না কাহিনী স্মৃতি কল্পনা লহরী
মধুমাখা কণ্ঠের কাকলি; যদি গান
ভাল লাগে, গেয়ো গান; যদি মুগ্ধ প্রাণ
নিঃশব্দ নিস্তব্ধ শান্ত সম্মুখে চাহিয়া
বসিয়া থাকিতে চাও, তাই র’ব প্রিয়া!
হেরিব অদূরে পদ্মা, উচ্চ তটতলে
শ্রান্ত রূপসীর মত বিস্তীর্ণ অঞ্চলে
প্রসারিয়া তনুখানি, সায়াহ্ন-আলোকে
শুয়ে আছে; অন্ধকার নেমে আসে চোখে
চোখের পাতার মত; সন্ধ্যাতারা ধীরে,
সন্তর্পণে করে পদার্পণ, নদীতীরে
অরণ্যশিয়রে; যামিনী শয়ন অর
দেয় বিছাইয়া, এক খানি অন্ধকার
অনন্ত ভুবনে। দোঁহে মোরা রব চাহি’
অপার তিমিরে; আর কোথা কিছু নাহি,
শুধু মোর করে তব করতল খানি,
শুধু অতি কাছাকাছি দুটি জন প্রাণী