রবীন্দ্রনাথ তার পাঠ্য—সীতার বনবাস, চারুপাঠ, সপ্তাবশতক ও মস্ত মোটা ব্যাকরণ। এ শুধু পড়ে যাওয়া নয়, মাসিক সাপ্তাহিকে সমালোচনা লেখা নয়, এ পণ্ডিতের কাছে মুখোমুখী দাড়িয়ে প্রতিদিন পরীক্ষা দেওয়া । সুতরাং সসঙ্কোচে বলা চলে যে সাহিত্যের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় ঘটলো চোখের জলে। তারপর বহু দুঃখে আর একদিন সে মিয়াদও কাটলে । তখন ধারণাও ছিল না যে, মানুষকে দুঃখ দেওয়া ছাড়া সাহিত্যের আর কোন উদ্দেশ্য আছে। যে পরিবারে আমি মানুষ, সেখানে কাব্য উপন্যাস দুনীতির নামান্তর, সঙ্গীত অস্পৃশ্য। সেখানে সবাই চায় পাশ করতে এবং উকীল হতে। এরি মাঝখানে আমার দিন কেটে চলে। কিন্তু হঠাৎ একদিন এর মাঝেও বিপৰ্য্যয় ঘটলো। আমার এক আত্মীয় তখন বিদেশে, তিনি এলেন বাড়ী। তার ছিল সঙ্গীতে অম্বুরাগ, কাব্যে আসক্তি ; বাড়ীর মেয়েদের জড় করে তিনি একদিন ”ಥ್ರ? শোনালেন রবীন্দ্রনাথের “প্রকৃতির প্রতিশোধ” । কে কতটা বুঝলে জানিনে কিন্তু যিনি পড়ছিলেন তার সঙ্গে আমার চোখেও জল এলো । কিন্তু পাছে দুৰ্ব্বলতা প্রকাশ পায়, এই লজ্জায় তাড়াতাড়ি বাহিরে চলে এলাম। কিন্তু কাব্যের সঙ্গে দ্বিতীয়বার পরিচয় ঘটলো এবং বেশ মনে পড়ে এইবারে পেলাম তার প্রথম সত্য পরিচয় । এরপরে এ বাড়ীর উকিল হ’বার কঠোর নিয়ম সংযম আর ধাতে সইলো না, আবার ফিরতে হলে আমাদের সেই পুরোনো পল্লী-ভবনে। কিন্তু এবার বোধোদয় নয়, বাবার ভাঙ্গ দেরাজ থেকে খুজে বের করলাম “হরিদাসের গুপ্তকথা” । আর বেরোলো “ভবানী পাঠক”। গুরুজনদের দোষ দিতে পারিনে, স্কুলের পাঠ্য তো নয়, ওগুলো বদ-ছেলের ১৫৩
পাতা:স্বদেশ ও সাহিত্য-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৫৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।