সাহিত্য রবীন্দ্র-সাহিত্যের ব্যাখ্যা করতে আমি পারিনে, কিন্তু ঐকাস্তিক শ্রদ্ধা ওর অস্তরের সন্ধান আমাকে দিয়েছে। পণ্ডিতের তত্ত্ববিচারে তাতে ভুল যদি থাকে তো থাক, কিন্তু আমার কাছে সেই সত্য হয়ে আছে। জানি রবীন্দ্র-সাহিত্যের আলোচনায় এ সকল অবাস্তর, হয়তো বা অর্থহীন, কিন্তু গোড়াতেই আমি বলেছি যে, আলোচনার জন্য আমি আসিনি, এর সহস্র ধারায় প্রবাহিত সৌন্দৰ্য্য, মাধুর্য্যের বিবরণ দেওয়াও আমার সাধ্যাতীত, আমি এসেছিলাম শুধু আমার ব্যক্তিগত গোটা কয়েক কথা এই জয়ন্তী-উৎসব সভায় নিবেদন করে দিতে । কাব্য, সাহিত্য ও কবি রবীন্দ্রনাথকে আমি যে ভাবে লাভ করেছি, তা জানালাম। মানুষ রবীন্দ্রনাথের সংস্পর্শে আমি সামান্তই এসেছি। কবির কাছে একদিন গিয়েছিলাম বাঙ্গলা সাহিত্যে সমালোচনার ধারা প্রবর্তিত করার প্রস্তাব নিয়ে। নানা কারণে কবি স্বীকার করতে পারেননি, তার একটা হেতু এই দিয়েছিলেন যে, যার প্রশংসা করতে তিনি অপারক, তার নিন্দে করতেও তিনি তেমনি অক্ষম। আরও বলেছিলেন যে, তোমবা যদি এ কাজ কর, কখনো ভুলো না যে, অক্ষমতা ও অপরাধ_ একবস্তু নয়। ভাবি, সাহিত্য বিচারে এই সত্যটা যদি সবাই মনে রাখতো! কিন্তু, এই সভার অনেকখানি সময় নষ্ট করেছি, আর না। অযোগ্য ব্যক্তিকে সভাপতি নির্বাচন করার এটা দণ্ড । এ আপনাদের সহঁতেই হবে । সে যাই হোক, রবীন্দ্র-জয়ন্তী উৎসব উপলক্ষে এ সমাদর ও সম্মান আমার আশার অতীত। তাই সকৃতজ্ঞ চিত্তে আপনাদিগকে নমস্কার জানাই । ১৩৩৮ - সালে ‘রবীন্দ্র-জয়ন্তী” উপলক্ষে পঠিত ।
পাতা:স্বদেশ ও সাহিত্য-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৫৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।