পাতা:স্বদেশ ও সাহিত্য-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিক্ষার বিরোধ প্রত্যেক মানব-জীবনের দুঃখের অধ্যায়েই তার অপরাধ ছাড়াও একটা জিনিষ আছে যা তার অদৃষ্ট, যে বস্তু তার দৃষ্টির বাহিরে, এবং যার ওপর তার কোন হাত নেই। তেমনি একটা সমগ্র জাতিরও দুঃখের মূলে তার দোষ ছাড়াও এমন বস্তু আছে যা তার সাধ্যের অতীত, যা তার দুর্ভাগ্য। আমাদের দেশের ইতিহাস র্যারা আলোচন করেছেন তারা বোধ হয় সম্পূর্ণ অসত্য বলে এ কথা উড়িয়ে দেবেন না। দুঃখ ও হীনতার মূলে আমাদের অদৃষ্ট বস্তুও অনেকটা দায়ী, যার ওপর আমাদের কর্তৃত্ব ছিল না। কিন্তু কবি এ কথা সম্পূর্ণ অশ্রদ্ধা করে’ উপমাচ্ছলে একটা গল্প বলেছেন । গল্পটা এই— “মনে কর এক বাপের দুই ছেলে। বাপ স্বয়ং মোটর হাকিয়ে চলেন । তার ভাবখান এই, ছেলেদের মধ্যে মোটর চালাতে যে শিখবে মোটর তারই হবে । ওর মধ্যে একটা চালাক ছেলে আছে, তার কৌতুহলের অন্ত নেই। সে তন্ন তন্ন করে দেগে গাড়ী চলে কি করে । অন্ত ছেলেটি ভাল মানুষ, সে ভক্তিভরে বাপেব পায়ের দিকে একদৃষ্টি তাকিয়ে থাকে, তার দুই হাত মোটরের হাল যে কোন দিকে কেমন করে ঘোরাচ্চে তার দিকেও খেয়াল নেই। চালাক ছেলেট মোটরের কল কারখানা পুরোপুরি শিখে নিলে এবং একদিন গাড়িখানা নিজের হাতে বাগিয়ে নিয়ে উৰ্দ্ধস্বরে বঁাশী বাজিয়ে দৌড় মারল । গাড়ী চালাবার সখ দিন রাত এমৃনি তাকে পেয়ে বসল যে, বাপ আছেন কি নেই সে হসই তার রইল না। তাই বলেই তার বাপ যে তাকে তলব করে গালে চড় মেরে তার গাড়ীটা কেড়ে নিলেন তা নয় ; তিনি স্বয়ং যে রথের রথী, ছেলেও সেই রথেরই রথী, এতে তিনি প্রসন্ন হ’লেন। ভাল মামুষ ছেলেটি দেখলে ভায়াটি তার পাক। ফসলের ক্ষেত লণ্ডভণ্ড ক’রে তার মধ্যে দিয়ে দিনে দুপুরে হাওয়া গাড়ী চালিয়ে বেড়াচ্চে, তাকে রোপে কার সাধা, তার সামনে দাড়িয়ে বাপের দোহাই পাড়লে “মরণং ধ্রুবমূ",—তখনো সে বাপের পায়ের দিকে তাকিয়ে রইল, আর বললে আমার আর কিছুতে দরকার নেই।” ৩১