পাতা:স্বদেশ ও সাহিত্য-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বদেশ তার সমস্ত সভ্যতার ভিত্তি, এর পরেই তার বিরাট সৌধ অভ্ৰভেদী হ’য়ে উঠেছে। এরই জন্যে তার সমস্ত শিক্ষা, সমস্ত সাধনা নিয়োজিত । আজ আমার কথায়, আমাদের ঋষিবাক্যে সে কি তার সমস্ত civilizationএর কেন্দ্র নড়িয়ে দেবে ? আমাদের সংসর্গে তার বহু যুগ কেটে গেল, কিন্তু আমাদের সভ্যতার আঁচটুকু পৰ্য্যন্ত সে কখনে৷ তার গায়ে লাগতে দেয়নি। আপনাকে এমনি সতর্ক, এমনি স্বতন্ত্র, এমনি শুচি করে রেখেছে যে কোনদিন এর ছায়াটুকু মাড়ায় নি । এই সুদীর্ঘ কালের মধ্যে এ দেশের রাজার মাথার কোহিনূর থেকে পাতালের তলে কয়ল পৰ্য্যস্ত, যেখানে যা কিছু আছে কিছুই তার দৃষ্টি এড়ায় নি। এটা বোঝা যায়, কারণ, এই তার সত্য, এই তার সভ্যতার মূল শিকড় । এই দিয়েই সে তার সমাজ দেহের সমস্ত সভ্যতার রস শোষণ করে, কিন্তু আজ খাম্‌কা যদি সে ভারতের আধিভৌতিক সত্যবস্তুর বদলে ভারতের আধ্যাত্মিক তত্ত্ব-পদার্থের inquiry করে? থাকে ত আনন্দ কোরব কি হুসিয়ার হ’ব—চিন্তার কথা । ইউরোপ ও ভারতের শিক্ষার বিরোধ আসলে এইখানে,—এই মূলে । আমাদের ঋষিবাক্য যত ভালই হোক তারা নেবে না, কারণ তা’তে তাদের প্রয়োজন নেই । সে তাদের সভ্যতার বিরোধী। আর তাদের শিক্ষা তারা আমাদের দেবে না–কথাটা শুনতে খারাপ কিন্তু সত্য। আর দিলেও তার যেটুকু ভিক্ষা সেটুকু না নেওয়াই ভাল । বাকিটুকু যদি আমাদের সভ্যতার অমুকুল না হয়, সে শুধু ব্যর্থ নয়, আবর্জন । তাদের মত পরকে মারতে যদি না চাই, পরের মুখের অন্ন কেড়ে খাওয়াটাই যদি সভ্যতার শেষ না মনে করি ত মারণমন্ত্র যত সত্যই হোক তার প্রতি নিলোভ হওয়াই ভাল । 88