পাতা:স্বদেশ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নূতন ও পুরাতন (: কর্ম— তখন আমারও মন নেচে ওঠে ; তখন ইচ্ছা করে, বহু বৎসরের গৃহবন্ধন ছিন্ন করে একেবারে বাহির হয়ে পড়ি । কিন্তু তার পরেই রিক্ত হস্তের দিকে চেয়ে চেয়ে ভাবি পাথেয় কোথায় ! হৃদয়ে সে অসীম আশা, জীবনে সে অশ্রান্ত বল, বিশ্বাসের সে অপ্রতিহত প্রভাব কোথায় ! তবে তো পৃথিবীপ্রান্তে এই অজ্ঞাতবাসই ভালো, এই ক্ষুদ্র সস্তোষ এবং নিজীব শাস্তিই আমাদের যথালাভ । তখন বসে বসে মনকে এই বলে বোঝাই যে, আমরা যন্ত্র তৈরি করতে পারি নে, জগতের সমস্ত নিগৃঢ় সংবাদ আবিষ্কার করতে পারি নে, কিন্তু ভালোবাসতে পারি, ক্ষমা করতে পারি, পরম্পরের জন্যে স্থান ড়ে দিতে পারি। দুঃসাধ্য দুরাশা নিয়ে অস্থির হয়ে বেড়াবার আবশ্যক কী ! নাহয় এক পাশেই পড়ে রইলুম, টাইমসের জগৎপ্রকাশক স্তম্ভে আমাদের নাম নাহয় নাই উঠল। কিন্তু দুঃখ আছে, দারিদ্র্য আছে, প্রবলের অত্যাচার অাছে, অসহায়ের ভাগ্যে অপমান আছে— কোণে বসে কেবল গৃহকর্ম এবং আতিথ্য করে তার কী প্রতিকার করবে ? হায়, সেই তো ভারতবর্ষের দুঃসহ দুঃখ । আমরা কার সঙ্গে যুদ্ধ করব ? রূঢ় মানবপ্রকৃতির চিরন্তন নিষ্ঠুরতার সঙ্গে ? যিশুখস্টের পবিত্র শোণিতস্রোত যে অমুর্বর কাঠিন্যকে আজও কোমল করতে পারে নি সেই পাষাণের সঙ্গে ? প্রবলতা চিরদিন দুর্বলতার প্রতি নির্মম, আমরা সেই আদিম পশুপ্রকৃতিকে কী করে জয় করব ? সভা করে ? দরখাস্ত করে ? আজ একটু ভিক্ষা পেয়ে, কাল একটা তাড়া খেয়ে ? তা কখনোই হবে না । তবে প্রবলের সমান প্রবল হয়ে ? তা হতে পারে বটে। কিন্তু যখন ভেবে দেখি, যুরোপ কতখানি প্রবল, কত কারণে প্রবল, যখন এই দুর্দান্ত শক্তিকে একবার কায়মনে সর্বতোভাবে অনুভব করে দেখি, তখন