পাতা:স্বদেশ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S e So স্বদেশ কোনো ছেদ পড়ে নাই । জীবনের ধারা কালি হইতে আজিকার মধ্যে সমানভাবেই গড়াইয়া আসিতেছে, কর্মের স্রোতে আপনার চিরাভ্যস্ত পথে স্থির হইয়া দাড়ায় নাই, তবু ক্লাস্ত মন আজিকার এই একদিনকে বিশেষ দিন নাম দিয়া প্রত্যহের এই বোঝাটাকে বহিবার জন্য নূতন বল অন্বেষণ করিতেছে। ইহার বিশেষ কারণ আছে। অভ্যাসের বেগ আমাদের অন্ধভাবে ঠেলিয়া লইয়া যায়— প্রাত্যহিক কাজের ভারে মৃত্যুর ঢালু রাস্তার দিকে আমরা গড়াইয়া চলিয়া যাই— নিজের কর্তৃত্বগৌরব অনুভব করিবার অবসর পাই না। নববর্ষের দিনে সেই অন্ধগতির মুখে একটা বাধার মতো দিয়া অভ্যস্ত কর্মচালিত মন নিজেকে স্বতন্ত্র জাগ্রতভাবে একবার অতুভব করিয়া লইতে চায় । সে গর্বের সহিত বলে, আজ হইতে আমি নববর্ষ আরম্ভ করিলাম, আমি নূতন সালের পথে যাত্রা করিয়া চলিলাম, এই বলিয়া ২রা বৈশাখের দিনে সে পুনরায় আপনার কোচ, বাক্সের উপর আরামে ঘুমাইয়া পড়ে এবং চিরাভ্যাসজরাজীর্ণ গর্দভের মতো বিনা বল্পায়— বিন চালনায় দিবারাত্রি তাহার রথ টানিয়া মৃত্যুর দিকে চলিতে থাকে। যে প্রাত্যহিক নির্দিষ্ট কর্ম আমাদের মনের উপরে ও কর্তা হইয়া উঠিয়াছে, মন নববর্ষের দিনে বৈরাগ্যের ছায়াপাত করিয়া সেই কর্মকে ছোটো করিয়া দেখিবার চেষ্টা করে। বলে, মৃত্যুতে সকল কর্মের অবসান হইবে, নববর্ষ সেই খবর দিতে আসিয়াছে ৷ বলে, “গ্রাস করে কাল পরমায়ু প্রতিক্ষণে”—বলে, “মনে কর শেষের সে দিন ভয়ংকর।” বলে, এই যে ধন জন মানের জন্য বৎসর বৎসর খাটিয়া মরিতেছ, একটি বৎসর আসিবে, যে সমস্ত কড়িয়া লইয়া তোমাকে রিক্তহস্তে বিদায় করিয়া দিবে। হয়তো এই-ই সেই বৎসর, কে বলিতে পারে ? মন তাই উপদেশ দেয়, কর্মকূপের দ্বারা মনের জীবনকে, কর্মের গতির দ্বারা মনের গতিকে নাশ করিয়ো না ।