পাতা:স্বদেশ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

> ob" স্বদেশ এখানে দুঃসহদীপ্তি বৈশাখ তাহার অখণ্ড রুদ্রভাবে একাকী অাসিয়া দণ্ডায়মান হয় ; তাহার কোনো কাজ– কোনো প্রয়োজন নাই ; সে ফলে পাক ধরাইতে বা মৌমাছির মধুভাণ্ডার পূর্ণ করিতে আসে না । ঘনঘোরশ্যামল শ্রাবণ বিদ্যুৎচকিত দিগদিগন্তরে তাহার বিপুল সমারোহ প্রসারিত করিয়া গম্ভীর মেঘগর্জনে এখানে আবিভূত হয়— শস্তক্ষেত্রে জলসেচন করিবার জন্য নহে ; তাহার নববারিধারা গৈরিকবসনা মুনিকন্যাদের মতো এই বিশাল নির্জনতার মধ্যে আঁকাবাকা চিত্র কাটিয়া, গহবর খুদিয়া, বালি ও কুড়ির স্তুপ রচনা করিয়া, কলহাস্তে অকারণ খেলা খেলিয়া যায় । ঋতুপর্যায় এখানে ঘরের ছেলের মতো আসে, কাহারো কোনো কাজ করিতে নহে— নিজের বিশুদ্ধ স্বরূপে বিরাজ করিতে । এই প্রয়োজনহীন বিপুল রিক্ততার মাঝখানে আমাদের স্নিগ্ধচ্ছায় আশ্রমটি । চারি দিকের এত-বড়ো বৃহৎ অবকাশের দ্বারা আমাদের অশ্ৰমশ্ৰী নিজেকে প্রকাশ করিতেছে। শিবের সুবিশাল দারিদ্র্যের মাঝখানে অন্নপূর্ণ। যেমন নিজের ঐশ্বর্য পরিস্ফুট করেন, সেইরূপ । পরস্পরকে পরম্পরের একান্ত প্রয়োজন ছিল— শু্যামলা আশ্রমলক্ষ্মী এই রক্তপাংশুমণ্ডিত শূন্তহস্ত উদাসীনকে বহুবর্ষ-তপস্যা দ্বারা প্রাপ্ত হইয়া পূর্ণতা লাভ করিয়াছে এবং পূর্ণ তা দান করিয়াছে। এই আশ্রমের মধ্যে তরুলতা আজ নবপল্লবে বিকশিত, আম্রবন এতকাল মুকুলগন্ধে বাতাসকে পাগল করিয়া দিয়া আজ তরুণ-ফলভারে সার্থক । আমলকীশ্রেণী তাহার গতবৎসরের গর্তভার মোচন করিয়া নবকিশলয়ে নবযৌবন লাভ করিয়াছে। শিরীষের গাছে ফুল ধরিয়া ঝরিয়া পড়িতেছে। জামের মঞ্জরী শাখা পরিপূর্ণ করিয়া মুখর মৌমাছির দমাবৃত্তিতে বিব্রত হইয়া উঠিয়াছে। এখানে কর্মের ক্ষুদ্রতা, কালের অনিত্যতা, জীবনের অনিশ্চয়তা, সুখদু:খের চঞ্চলf— এই-সমস্ত কথা আলোচনা করিবার নহে। নিজের